সাঁতার শিখতে পারা শিশুদের অধিকার, শেখানোর ব্যবস্থা করা আমাদের কর্তব্য

প্রথম পাতা » ফিচার » সাঁতার শিখতে পারা শিশুদের অধিকার, শেখানোর ব্যবস্থা করা আমাদের কর্তব্য


সাঁতার শিখতে পারা শিশুদের অধিকার, শেখানোর ব্যবস্থা করা আমাদের কর্তব্য

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিদিন ৪০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। প্রতিটি শিশু অপার সম্ভাবনা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। কিন্তু এমন একটা বয়সে তারা মারা যায়, যে বয়সে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে তারা হয়তো হয়ে উঠতে পারত এক একজন সুনাগরিক। এই বাস্তবতায় ‘বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ’ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে অংশীজনদের সাথে নিয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে সিআইপিআরবি (সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ)।

শিশুদের সঠিক বয়সে সাঁতার শেখা, কেউ ডুবে গেলে তাকে উদ্ধার কৌশল, তৃণমূল মানুষকে পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচাতে, শিশুদের সাঁতার শেখানোতে উদ্যোগ নেওয়া, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় এই সভায়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর প্রেক্ষাপট, সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়ে আলোচনার অবতারনা করেন সিআইপিআরবি’র ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর, ড. আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, মাত্র এক হাজার টাকা খরচ করেই প্রতিটি শিশুকে সাঁতার শেখানো ও উদ্ধার পদ্ধতি শেখানো সম্ভব। আর পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর অন্যতম সময় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা। এই সময় যদি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের এলাকাভিত্তিক শিশুযত্ন কেন্দ্রে রাখা যায়, তাহলেও ডুবে মৃত্যু রোধ করা যায়।

এই তথ্য আমলে নিয়ে প্রধান অতিথি লাকি ইনাম (চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি) বলেন, এখন সময় এসেছে সাঁতার শেখানোকে সপ্তম টিকা হিসাবে দাবী করার এবং প্রতিষ্ঠা করার। সাঁতারই পারে একটি শিশুকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে। শিশু একাডেমির অধীনে বাংলাদেশ সরকার এরই মাঝে “সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুদের সমন্বিত বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা প্রদান প্রকল্প’ নামের তিনবছর মেয়াদী প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যা শেষ হবে ২০২৩ সালে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬ টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ শিশুকে সাঁতার শেখানো হবে। যা শিশুদের নিরাপত্তার জন্য খুবই কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, মো. শরিফুল ইসলাম, মহাপরিচালক, শিশু একাডেমি। তিনি বলেন, প্রতিটি শিশু সম্ভাবনাময়। তাদের শিশুকাল সুরক্ষিত করতে পারলে তারা সুনাগরিক হিসাবে গড়ে উঠবে। আর এজন্য সকল ব্যবস্থা আমাদের গ্রহণ করতে হবে। এজন্যই সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যার মাধ্যমে গ্রামের শিশুদের সাঁতার শেখানো হবে। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অনেক জীবন আমরা রক্ষা করতে পারবো বলে আমরা মনে করি।

উপস্থিত আলোচকরা জানান, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু দুনিয়াজুড়ে একটি নিরব মহামারী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই মৃত্যুকে নিছক দুর্ঘটনা হিসাবে গণনা করা হয়। ফলে, জাতীয় মৃত্যু নথিতে এই বিশাল সংখ্যক মৃত্যু দৃষ্টিগোচর হয়না। তাই মৃত্যু নথিতে, পানিতে ডুবে মৃত্যুকে মৃত্যুর কারণ হিসাবে উল্লেখ করা জরুরি। এবং এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে উদ্যোগী হতে হবে। একই সাথে পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধের যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে তা তৃণমূল পর্যায়ে বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।