কঠোর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে বিএনপি
প্রথম পাতা » জাতীয় » কঠোর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে বিএনপি
বাংলার-পৃথিবীঃ সরকার পতনের একদফা দাবিতে আরও কঠোর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে বিএনপি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘিরেই এখন সব প্রস্তুতি দলটির। তফশিল ঠেকাতে করণীয় ঠিক করতে সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ নিচ্ছে হাইকমান্ড।
দ্বিতীয় দফার অবরোধ শেষ হলে একদিন বিরতি দিয়ে ফের দুদিন অবরোধ বা হরতাল কর্মসূচির কথা ভাবছে দলটি। এরপর আবারও দুদিন (শুক্র ও শনি) বিরতি দিয়ে টানা তিন দিন অথবা পাঁচ দিন কর্মসূচি পালনের পরামর্শ দিয়েছেন নেতারা। আজ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
নীতিনির্ধারকদের মতে, তফশিল ঘোষণার তারিখ জানার চেষ্টা করছেন তারা। সে অনুযায়ীই কর্মসূচি আসবে। যেদিন তফশিল ঘোষণা করা হবে তার আগের কয়েকদিন দলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে তৃণমূলেরও মতামত নেওয়া হয়েছে। তারাও আরও কঠোর কর্মসূচি চান। দেশব্যাপী একই সঙ্গে অবরোধ-হরতাল কর্মসূচির প্রস্তাব রয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আবারও কর্মসূচি দেওয়া হবে। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ীই কর্মসূচি আসবে।
হামলা-মামলা-গ্রেফতার-নির্যাতন উপেক্ষা করে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ আজ রাস্তায় নেমে এসেছে। সরকার একতরফা নির্বাচনের যতই চেষ্টা করুক এবার আর তা হতে দেওয়া হবে না। আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। গণতন্ত্রকামী মানুষের বিজয় সুনিশ্চিত।
দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল, তিন দিন অবরোধের পর রোববার ভোর ৬টা থেকে আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ চলছে। যা আগামীকাল মঙ্গলবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত চলবে। দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ৫ হাজার ২৮৪ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোট মামলা হয়েছে ১২২টির বেশি এবং একজন সাংবাদিকসহ মৃত্যু হয় ১০ জনের।
এর মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর ও এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিলকিস আক্তার জাহান শিরীন, কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপনসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। আরও বেশ কয়েকজন নেতার বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে। তৃণমূলেরও একই অবস্থা।
একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাকর্মীই এখন বাসায় ঘুমাতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে ‘ডু অর ডাই’ মনোভাব নিয়েই আন্দোলন করছেন তারা। তাই কঠোর আন্দোলন থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই। সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দৃঢ় মনোবল রয়েছে। তারা গ্রেফতার হলে মাঠে থেকে হতে চান।
নেতারা আরও জানান, তফশিলের আগেই দাবি আদায় করতে চান তারা। এ নিয়ে তৃণমূলের কাছ থেকে চাপ রয়েছে। কারণ তাদের ধারণা তফশিল ঘোষণা হয়ে গেলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। তখন দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন টেনে নিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। তাই যা করার তফশিলের আগেই করতে হবে। সে প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।
এদিকে আন্দোলন সফলে এখন নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্যকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন বিএনপির হাইকমান্ড। একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, ওয়ান-ইলেভেনেও বিএনপিকে ভাঙার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। সফল হয়নি। এখনো আবার বিএনপিকে ভাঙার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু নেতাদের যতই গ্রেফতার, ভয়ভীতি, নির্যাতন করা হোক না কেন, তা কোনোদিনই সফল হবে না।
কারণ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে তারেক রহমান দলের হাল ধরেছেন। অনেকে দলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বেই নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছেন। তারপরও কারও প্রলোভন কিংবা প্ররোচনায় যাতে কেউ বিভ্রান্ত না হয় সেজন্য ইতোমধ্যে নেতাদের সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন বলেন, ইতোমধ্যে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন সফলের জন্য কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সর্বশেষ রোববার পাঠানো একটি বার্তায় বলা হয়েছে, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে দল এবং দেশের জন্য ভূমিকা রেখেছেন, রেখে চলেছেন।
একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসাবে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন কারণে দলের অনেক সদস্যকে হয়তো যথাযোগ্য অবস্থানে মূল্যায়ন করা যায়নি। এটি নেতাকর্মীদের ব্যর্থতা নয়। বরং বলা যায় এটি দলীয় সীমাবদ্ধতার কারণে। সুতরাং এ নিয়ে যদি কারও মনে ক্ষোভ বা অভিমান থাকে সেটি সবাইকে ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকা এখন সময়ের দাবি।
কারণ বর্তমানে দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার আদায়ে চলমান আন্দোলনে গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে বিএনপির নেতৃত্ব সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তাই সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যে যার অবস্থান থেকে আন্দোলন সফল করার কথাও বার্তায় বলা হয়েছে।