বিশ্বকাপে কিশোর লেগি

প্রথম পাতা » খেলা » বিশ্বকাপে কিশোর লেগি


বিশ্বকাপে কিশোর লেগি
বাংলার-পৃথিবীঃ  কারও বয়স ১৭ বছর, কারও ১৯। এ বয়সে অনেক ক্রিকেটার বিশ্বকাপ খেলেছেন। বাংলাদেশের তামিম ইকবাল ২০০৭ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ অভিষেক করেছিলেন ১৯ বছরে। বিশ্বকাপে এবারের ১৫ জনের দলে অনূর্ধ্ব-১৯ বছরের কেউ না থাকলেও বহরে আছেন দু’জন টিনএজার– ওয়াসি সিদ্দিকী ও শেখ ইমতিয়াজ শিহাব। জাতীয় দলের না হয়েও জাতীয় দলের সঙ্গী তারা। বিশ্বকাপের এক ভেন্যু থেকে অন্য ভেন্যুতে সাকিব আল হাসানদের নেটে ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে তাদের।

বিশ্বকাপ দলে শিহাব ও ওয়াসির পরিচয় নেট বোলার হলেও দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ! কারণ তারা লেগস্পিনার। অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলা দুই লেগিকে প্রথম থেকে দলের সঙ্গে রাখতে চেয়েছিলেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ভিসা জটিলতার কারণে দু’জনকে প্রথম থেকে না পেলেও মুম্বাইয়ে দলের সঙ্গী হলেন ওয়াসি। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আজ নেটসেশনে বল করবেন তিনি। ভাড়া করে বা দেশের বয়সভিত্তিক দল থেকে লেগস্পিনার নেট বোলার আনা হলেও বিশ্বকাপ দলের কেউ নন। তাই কোচ হাথুরুসিংহের আক্ষেপ অনেকটা ‘অ্যানসেন্ট মেরিনারের মতো– চারদিকে পানি, অথচ পান করার এক ফোঁটাও নেই। হাথুরুসিংহেও আক্ষেপ করতে পারেন নেটে লেগস্পিনারের ছড়াছড়ি কিন্তু খেলার জন্য কেউ নেই।

২০১৪ সালে বিসিবির চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে লেগস্পিনারের খোঁজে ছিলেন হাথুরুসিংহে। প্রথম মেয়াদে জুবায়ের হোসেন লিখনকে জাতীয় দলে তুলে নিয়েছিলেন নেট থেকে। অপরিণত বয়সে টেস্ট ক্রিকেটারের লেভেল পাওয়া লিখন হারিয়েও গেছেন দ্রুত। এরপর আইন করে জাতীয় লিগে খেলানো হয় লেগস্পিনার। সেবার লিখনকে একাদশে না রাখায় ঢাকা বিভাগের কোচ জাহাঙ্গীর আলমকে কোচের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। দেশে লেগস্পিনার সৃষ্টিতে বিপ্লব ঘটাতে সে কী প্রাণান্তকর চেষ্টা।

বাস্তবতা হলো দেশের ক্রিকেটের জমিনে বাঁহাতি, ডানহাতি অফস্পিনার সোনা ফললেও লেগস্পিনারের ফলন হয়নি। বয়সভিত্তিক দল থেকে যে দু-চারজনকে নির্বাচকরা বিশেষ বিবেচনায় তুলে এনেছেন, জাতীয় দলের উপযুক্ত হয়ে গড়ে ওঠেনি তাদের কেউ। রিশাদ হোসেন আন্তর্জাতিক টি২০ খেললেও নিজেকে কার্যকর প্রমাণ করতে পারেননি এখনও। নিজের দ্বিতীয় মেয়াদেও হাথুরুসিংহেকে লেগির খোঁজে থাকতে হলো। লেগস্পিনারের শূন্যতা নিয়ে ঘোষণা করতে হয়েছিল বিশ্বকাপ দল। অথচ বাংলাদেশ ছাড়া ভারত বিশ্বকাপে খেলা বাকি ৯ দলের প্রায় দলে চায়নাম্যান বা লেগস্পিনার আছে।

বিশ্বকাপ ম্যাচে ওই লেগি ও চায়নাম্যানদের সামাল দিতে নেটে অনুশীলন করতে হচ্ছে লিটন কুমার দাসদের। কেরালার কারাপাস জিয়াস তো ঢাকা থেকেই দলের সঙ্গে আছেন ভাড়াটে চায়নাম্যান হিসেবে। স্কুল ক্রিকেট থেকে উঠে আসা বিসিবি অনূর্ধ্ব-১৭ দলের লেগস্পিনার রংপুর বিভাগের শিহাবকেও প্রথম থেকে পেয়েছেন কোচ। নেটে যাকে বেশি প্রয়োজন ছিল সেই অনূর্ধ্ব-১৯ দলের লেগস্পিনার ওয়াসি সিদ্দিকীকে পেতে কিছুটা দেরি হলো ভিসা জটিলতার কারণে। সে যাই হোক, শুক্রবার মুম্বাইয়ে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া ওয়াসি আজ থেকে বিশ্বকাপ দলের নেট বোলার।

ওয়াসি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছেন। ২০২৪ সালের যুব বিশ্বকাপ দলের নিয়মিত সদস্য মনে করা হচ্ছে তাঁকে। বিসিবির ন্যাশনাল গেম ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার আবু ইমাম মো. কাউসার ঢাকা থেকে ফোনে বলেন, ‘বয়সভিত্তিক দলে সে ভালো করছে। কোয়ালিটি লেগস্পিনার সে। বিশ্বকাপ দলের নেট বল করার জন্য তাঁকে নেওয়া ভালো সিদ্ধান্ত। এতে শিহাব আর ওয়াসি দু’জনেরই লাভ হবে। বিশ্বকাপে দলের সঙ্গে অনেক কিছু শিখতে পারবে। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন বড় হবে।’

এভাবে ঘসেমেজে লেগস্পিনারদের হয়তো কিছুটা পথ এগিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু তাদের আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হলে খেলাতে হবে লিগে। প্রথম শ্রেণির লিগ, বিপিএল ও লিস্ট-এ ক্রিকেটে টানা ম্যাচ খেলার সুযোগ দেওয়া হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজেদের আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে পারবেন। বাস্তবতা হলো লেগস্পিনাররা দেশের কোচদের কাছেই তো উপেক্ষিত। এই গোড়ার গলদ ঠিক করতে না পারলে পরের বিশ্বকাপের নেটেও লেগস্পিনার নিতে হবে বয়সভিত্তিক দল থেকে। কিংবা ভারত থেকে ভাড়া করতে হবে কোনো চায়নাম্যান।