একের পর এক মৃত্যু চট্টগ্রামে

প্রথম পাতা » ফিচার » একের পর এক মৃত্যু চট্টগ্রামে


ফাইল ছবি
বাংলার-পৃথিবীঃ    চট্টগ্রামের হালিশহরে গত ২৭ আগস্ট বাসার সামনে নালায় পড়ে হারিয়ে যায় দেড় বছরের ইয়াছির আরাফাত। প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর পাওয়া যায় তার লাশ। এ ঘটনার সাত দিনের মাথায় কান্নার রোল পড়ে আরেক শিশু আবদুল্লাহর বাসায়। অন্যদিনের মতো গত শুক্রবার বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যায় পাঁচ বছরের আবদুল্লাহ। হঠাৎ খালে পড়ে হারিয়ে যায় সে। পরদিন চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং এলাকায় খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার হয়।

দুর্ঘটনা দুটির পর প্রশ্ন ওঠে, ছোট্ট আরাফাত ও আবদুল্লাহর মৃত্যুর দায় আসলে কার? এমন দুঃসময়ে কাউকে পাশেও পাচ্ছে না পরিবার দুটি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কেউ এখন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কথা বলেনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও খবর নেননি। তাদের এমন নির্লিপ্ততায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আবদুল্লাহর দাদা আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘নাতির মৃত্যুতে আমাদের পরিবার তছনছ। অথচ দায়িত্বশীল কেউ দেখা করতেও এলেন না! নাতিকে না পেয়ে এলাকায় মাইকিং করেছি। মানুষের কাছে জানতে চেয়েছি, তাকে দেখেছে কিনা। আমাদের ওপর দিয়ে কী ঝড় যাচ্ছে, তা কেউ বুঝবে না।’

একই রকম মন্তব্য করেন আরাফাতের বাবা সাদ্দাম হোসেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘নালার ওপর যাদের স্লাব দেওয়ার কথা, তারা ঘুমাচ্ছে আর আমাদের বুক খালি হলো।’ খোলা নালায় স্লাব দেওয়া থাকলে ছেলেকে এভাবে হারাতে হতো না বলে উল্লেখ করেন তিনি। আরাফাতের বাবা বলেন, ‘নির্মম ঘটনায় ছেলেকে হারালাম, অথচ কারও একটু সহানুভূতি পেলাম না! এর বিচার একদিন আল্লাহ করবেন।’

গত আগস্টে এমন আরেক ঘটনায় কলেজপড়ুয়া মেয়ে নিপা পালিতকে হারান হাটহাজারীর উত্তম পালিত। তিনি বলেন, ‘যে নালায় আমার মেয়ে ভেসে গেছে, সেটি এখনও অরক্ষিত। আশপাশের আরও কয়েকটি নালার একই অবস্থা।’ মেয়েকে নিয়ে উত্তম পালিতের অনেক স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন নগরীর খোলা-অরক্ষিত নালায় ভেসে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ডবলমুরিং ও হালিশহর এলাকার সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, ‘নালা ও খালের পাড় সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব সিটি করপোরেশন ও সিডিএর। তাদের অবহেলার কারণে একের পর এক প্রাণ যাচ্ছে। এসব পরিবারকে সান্ত্বনা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দায়িত্বও তাদের। তবে আমি স্বজনহারা একটি পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি।’

স্থানীয় সংসদ সদস্য এমন বললেও চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘নালা ও খালে পড়ে যারা মারা গেছেন, তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তথ্য না থাকায় তাদের পরিবারের কাছে যেতে পারছি না। আমরা গভীর শোক ও সহানুভূতি প্রকাশ করছি।’ গত মাসে নিপা পালিতের বাড়িতে গিয়ে শোকাহত পরিবারকে এক লাখ টাকা দেওয়ার কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘এসব নালা ও খাল সুরক্ষিত রাখার কথা সিডিএর। জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়নও করছে তারা।’

কিন্তু মেয়রের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আর যেসব জায়গায় কাজ চলছে, সেখানে কাজ শেষ হলেই নিরাপত্তা বেষ্টনী করে দেওয়া হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে খাল-নালা রয়েছে ১ হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া খাল ১৯ কিলোমিটার। উন্মুক্ত নালা রয়েছে ৫ হাজার ৫২৭টি স্থানে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দাবি, দুই বছরে ২৫ হাজার বর্গফুট স্লাব মেরামত ও নির্মাণ করা হয়েছে, ১৫ হাজার বর্গফুট নিরাপত্তা বেষ্টনী রয়েছে। চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খাল-নালা সুরক্ষিত করার কাজ চলছে। এর মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে।’
চট্টগ্রাম নগরীর নালা ও খালে পড়ে গত দেড় বছরে প্রাণ গেছে ১০ জনের। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরস্পরের ওপর দায় চাপিয়েছে সিডিএ ও চসিক।