অহেতুক বা ফোবিয়া ভয় দূর করুন

প্রথম পাতা » ফিচার » অহেতুক বা ফোবিয়া ভয় দূর করুন


 ফাইল ছবি

ভীতি মানুষের একেবারে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। তবে এই ভীতি যদি অযৌক্তিক হয়, তখন সেটিকে বলা হয় ফোবিয়া বা অযৌক্তিক ভীতি। ফোবিয়ার উপযুক্ত কারণ নেই। তবুও বিশেষ কিছু পরিস্থিতি, বস্তু বা প্রাণী থেকে অযৌক্তিক ভয় পাওয়া, যেমন– টিভিতে সাপ দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করা, উঁচু জানালা থেকে বাইরে তাকালে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়া ইত্যাদি। আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে– যেসব বিষয়ে ব্যক্তির অযৌক্তিক ভয় আছে, সে বিষয় বা পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা। যেমন– যিনি মানুষের ভিড় বা খোলা জায়গায় ভয় পান, তিনি দাওয়াতে যান না, বাজারে যান না, বদ্ধ জায়গায় ভয় পান, সব সময় ঘরের দরজা খোলা রাখেন, লিফটে ওঠেন না। কখনও যদি এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়েই যান, তখন তার মধ্যে উৎকণ্ঠা বা অ্যাংজাইটির লক্ষণগুলো তৈরি হয়। যেমন– রক্তচাপ পরিবর্তন হওয়া, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসা, বুক ধড়ফড় করা, ঘাম হওয়া, মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা, চিৎকার করা, অস্বাভাবিক আচরণ করা, মুখের ভেতর শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। শৈশবের ঘটনা-দুর্ঘটনা, একজন মানুষের বেড়ে ওঠা, তার মনের গড়ন, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি কারণে ফোবিয়া হতে পারে।
সাধারণভাবে ফোবিয়াকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়–

সুনির্দিষ্ট ফোবিয়া
কোনো বস্তু বা বিশেষ পরিস্থিতির প্রতি অহেতুক অযৌক্তিক ভয়। যেমন কোনো বিশেষ প্রাণী বা পোকার প্রতি ফোবিয়া, সাপের ছবি দেখে উদ্বিগ্ন হওয়া, উঁচু জায়গায় উঠে ভয় পাওয়া ইত্যাদি।

সামাজিক ফোবিয়া
সামাজিক অনুষ্ঠান, সভা, দাওয়াতে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে, নিজেকে প্রকাশ করতে ভীষণভাবে অস্বস্তি বোধ করে। সে কারণে সে সামাজিকতা এড়িয়ে চলে।

অ্যাগোরাফোবিয়া
উন্মুক্ত খোলা জায়গা, জনবহুল এলাকা, বাজার, বাস, ট্রেন ইত্যাদিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ফলে সে এগুলো এড়িয়ে চলে।
ভয় পাওয়ার মতো কোনো কারণ না থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ ভয় পায়, সেটাই ফোবিয়া। যেমন– সাপ সবাই ভয় পায়, কিন্তু সাপের ছবি বা ভিডিও দেখে অযৌক্তিক ভয় পাওয়াটাই ফোবিয়া। ফোবিয়ার চিকিৎসায় প্রধানত সাইকো থেরাপি-কগনিটিভ থেরাপি, বিহেভিয়ার থেরাপি ইত্যাদির সঙ্গে উৎকণ্ঠাবিরোধী ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। একটু ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করালে ভালো ফল পাওয়া যায়। যে বিষয় বা পরিস্থিতির প্রতি ফোবিয়া আছে, তা এড়িয়ে না চলে ধাপে ধাপে সেটির সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করাতে হবে; প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা