যেসব কারণে যখন তখন ব্যথার ওষুধ নয়

প্রথম পাতা » ফিচার » যেসব কারণে যখন তখন ব্যথার ওষুধ নয়


ফাইল ছবি

ব্যথার সমস্যা নেই এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। কারও শরীরে ব্যথা, আবার কারও ব্যথা মনে। মনের ব্যথা নিরাময়ে কার্যকর কোনো ওষুধ চিকিৎসাবিজ্ঞান উপহার দিতে না পারলেও শরীরের ব্যথা উপশমের কার্যকর ওষুধ রয়েছে অসংখ্য। অনেকেই আছেন শরীরের কোথাও ব্যথা হলেই হরহামেশা ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু এ ব্যথানাশক ওষুধগুলোর সঠিক নির্দেশনা, সেবনের মাত্রা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা সম্পর্কে না জেনে সেবন করলে তা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।

যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশে শুধু ব্যথানাশক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাবে প্রতিবছর প্রায় এক হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও এর চিত্র যে ভয়াবহ, তা সহজে অনুমান করা যায়। কারণ শুধু ব্যথার জন্য, তা সে মাথাব্যথাই হোক আর গিঁটে ব্যথা, বেশির ভাগ মানুষই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ কিনে সেবন করেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বিক্রির আইনগত বাধা অথবা যথেষ্ট তদারকির অভাবের মূল কারণ। কিন্তু এভাবে সঠিক নির্দেশনা না জেনে ব্যথানাশক ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার হিতে বিপরীত হতে পারে।

ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে পেপটিক আলসার বা অন্ত্রের ক্ষত এবং কিডনি বৈকল্য বা রেনাল ফেইলিওর। প্রায় ৩০ শতাংশ পেপটিক আলসারের মূল কারণ ব্যথানাশক ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার। এর ফলে রক্তবমি বা কালো পায়খানা (যা পাকস্থলী বা খাদ্যনালির ভেতরে রক্তপাতের জন্য হয়ে থাকে) এমনকি খাদ্যনালি ও পাকস্থলী ফুটোও হয়ে যেতে পারে; যা একজন মানুষকে অনায়াসেই মৃত্যুর কোলে ধাবিত করতে পারে।

ব্যথানাশক ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপসহ হৃদরোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া ত্বকে ফুসকুড়ি, শরীরে পানি আসা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়াসহ রয়েছে নানা বিপত্তি। সাধারণত অতিরিক্ত বয়স, ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস। একই সঙ্গে একাধিক ওষুধের ব্যবহার, ব্যথানাশক ওষুধের উচ্চমাত্রা, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের ব্যবহার, ব্যথার ওষুধজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রয়ার পূর্ব ইতিহাস অথবা পেপটিক আলসার বা কিডনি সমস্যার পূর্ব ইতিহাস– এসব ব্যথানাশক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দেয় বহুলাংশে। যদি কোথাও ব্যথা হয়েই থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে ওষুধ খাওয়া উচিত। কারণ একজন চিকিৎসকই ওষুধের সঠিক নির্দেশনা, মাত্রা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং বিধিনিষেধের কথা মাথায় রেখে রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের উপদেশ দেন।
লেখক : কনসালট্যান্ট, ইমপালস হাসপাতাল, ঢাকা।