ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস
প্রথম পাতা » ফিচার » ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিসডায়াবেটিসের একটি মারাত্মক জটিলতা হলো, ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস। দীর্ঘদিন রক্তে উচ্চমাত্রার গ্লুকোজের মাত্রা এমন জটিলতা তৈরি করতে পারে। সাধারণত টাইপ-১ ডায়াবেটিসে এ জটিলতা সবচেয়ে বেশি হয়। দীর্ঘদিনের টাইপ-২ ডায়াবেটিসেও এমন জটিলতা তৈরি হতে পারে।
টাইপ-১ ডায়াবেটিসের একেবারে শুরুতেই এমন দশা হতে পারে। এ ছাড়া যে কোনো ধরনের ইনফেকশন, শল্যচিকিৎসা, শারীরিক ও মানসিক অভিঘাত, স্ট্রোক, হৃদরোগ (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন), গর্ভাবস্থা, অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ ইত্যাদি ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস তৈরির নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।
ইনসুলিন নির্ভরশীল ডায়াবেটিস রোগী ইনসুলিন ছেড়ে দিলে অথবা কম পরিমাণ ইনসুলিন নিতে থাকলে এমনটি হতে পারে। ইনসুলিন কলম কিংবা ডিভাইসের অকার্যকারিতা, ইনসুলিন প্রদানে ভুলভাল হলেও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। স্টেরয়েড, কোকেন, আরও কিছু ওষুধের কারণে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস হয়ে থাকে।
ইনসুলিনের অভাবে রক্তে চিনির মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। কোষে গ্লুকোজ প্রবেশ করানোর চাবিকাঠি হচ্ছে ইনসুলিন। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলেও কোষ জ্বালানি হিসেবে এটি ব্যবহার করতে পারে না। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ভাঙতে থাকে চর্বি ও আমিষ। তৈরি হয় কিটোঅ্যাসিড। দেহের জন্য এই অ্যাসিডীয় বা অম্লীয় পরিবেশ মোটেও সুখকর নয়।
এমনটি হলে রোগীর তৃষ্ণা বেড়ে যায়। মূত্র নিঃসরণ অনেক বৃদ্ধি পায়। পায়ে চাবানো-কামড়ানো ব্যথা, পেটেব্যথা, অরুচি, বমি, প্রচণ্ড ক্লান্তি, ঝাপসা দৃষ্টি এসে ভর করে, পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়, রোগীর রক্তচাপ কমে যায়, তাপমাত্রা কমে যায়, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, কথাবার্তা হয়ে পড়ে অসংলগ্ন এবং একসময় রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। বয়স্কদের এ রোগে মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ।
এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি। এমনটি হলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে নিবিড় তত্ত্বাবধান কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। পানিশূন্যতা দূর করার পাশাপাশি ইনসুলিন চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এ সময় খুব দ্রুত পটাশিয়াম লবণ কমে যেতে পারে; সেদিকে নজর রাখতে হবে। ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে।
ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা পরখ করতে হবে নিয়মিত।
লেখক : মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, বরিশাল।