শিশু অতিরিক্ত চঞ্চল হলে করণীয়

প্রথম পাতা » ফিচার » শিশু অতিরিক্ত চঞ্চল হলে করণীয়


শিশু অতিরিক্ত চঞ্চল হলে করণীয়

শিশুরা স্বভাবগতভাবেই চঞ্চল। কিন্তু কখনও কখনও দেখা যায়, কোনো শিশু অতিরিক্ত চঞ্চলতার কারণে দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়। অতিরিক্ত চঞ্চল শিশুদের পড়ালেখায় মনোযোগ থাকে না। হঠাৎ হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত দুরন্তপনার কারণে স্কুলে-বাসায় অন্যের বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে এবং প্রায়ই তারা ছোটখাটো দুর্ঘটনায় আঘাত পায়। তখন এটিকে শিশুর একটি মানসিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যার নাম অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভ ডিজঅর্ডার, বাংলায় বলা যেতে পারে ‘অমনোযোগী অতি-চঞ্চল শিশু’। এ সমস্যার মূল লক্ষণগুলো হচ্ছে–
• পড়ালেখা, খেলা কোনো কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারে না।
• অতিরিক্ত দুরন্তপনা করে, চঞ্চলতার জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনাবশত আঘাত পায়।
• মনোযোগ না দেওয়ার কারণে সহজ কাজগুলোও ভুল করে– স্কুলে বই, পেনসিল ইত্যাদি হারিয়ে বাড়ি ফেরে।
• অভিভাবকের নির্দেশ সঠিকভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়।
• বেশি কথা বলে, ধৈর্য ধরতে পারে না।
• অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠে, অকারণে কান্নাকাটি করে।
• ঠিকমতো এক জায়গায় বসে না, সারাক্ষণ নড়াচড়া করতে থাকে।
• প্রশ্ন করার আগেই উত্তর দেয়, অন্যের কথার মধ্যে বাধা দেয়।
• কোনো কাজ গুছিয়ে করতে পারে না।
• নিজের সাধারণ যত্ন– দাঁত মাজা, গোসল করা ইত্যাদি ভুলে যায়।
• একটু বেশি সময় মাথা খাটিয়ে করতে হয় এমন কাজ এড়িয়ে চলে।
সমস্যার কারণ : এ সমস্যা কেন হয়, তার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও ধরা হয় পরিবারে কারও মধ্যে যদি এ সমস্যা থাকে বা শিশুর জন্মের সময় কোনো জটিলতা হলে, শিশু গর্ভে থাকাকালে মা ধূমপান বা মদ্যপানে আসক্ত হলে, জন্মের সময় শিশুর ওজন কম থাকলে, সিসা বা ভারী ধাতুর বিষক্রিয়ায় শিশু আক্রান্ত হলে, শিশুর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তার অনুকূলে না থাকলে, কৃত্রিম রংযুক্ত খাদ্য খেলে এ সমস্যা হতে পারে।
শিশুর চিকিৎসা : মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তার আচরণগত সমস্যার ব্যাপারটি বোঝার চেষ্টা করবেন এবং তা শুধরে দেওয়ার জন্য মা-বাবাকে সাহায্য করবেন। প্রয়োজনে চাইল্ড নিউরোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে তাকে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। অমনোযোগী
অতি-চঞ্চল শিশুর পরিচর্যায় মা-বাবা যা করতে পারেন–
• রুটিন তৈরি করা;
• বাসার জন্য নিয়ম তৈরি;
• নির্দেশনা বুঝিয়ে দেওয়া;
• ভালো কাজের পুরস্কার;
• বন্ধু-বান্ধবের সহায়তা;
• ডায়েরি ব্যবহার;
• শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করা;
• খাদ্য তালিকা ও ব্যায়াম;
• রূঢ় আচরণ পরিহার;
• অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের দিকে মনোযোগ না দেওয়া;
• একা খেলা যায় এমন খেলা দিন;
• শিশুর জন্য মনোব্যবহারিক চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া।
লেখক : ডা. আহমেদ হেলাল, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।