ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কাদের বেশি

প্রথম পাতা » ফিচার » ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কাদের বেশি


ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কাদের বেশি

ডায়াবেটিস একটি বিপাকজনিত সমস্যা, যেখানে রক্তের শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। আমাদের দেহের অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেহের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিনের কাজ হলো গ্লুকোজকে মানুষের দেহের কোষে পৌঁছে দেওয়া। এরপর সেই গ্লুকোজ ব্যবহার করে শরীরের কোষগুলো শক্তি উৎপাদন করে।
সেই শক্তি দিয়েই নিত্যকার কাজকর্ম করে মানুষ। সুতরাং যখন গ্লুকোজ শরীরের কোষে পৌঁছাবে না, তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হবে। ইনসুলিনের পরিপূর্ণ বা আংশিক ঘাটতিতে অথবা ইনসুলিনের কার্যকারিতা হ্রাসে কিংবা এ দুটি অবস্থার মিলিত প্রভাবে রক্তের স্বাভাবিক গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস হয়। ডায়াবেটিসের সাধারণ কিছু লক্ষণ রয়েছে। লক্ষণগুলো হলো– ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, তেষ্টা পাওয়া, নিয়মিত খাওয়ার পরও ঘন ঘন খিদে, প্রচণ্ড পরিশ্রান্ত অনুভব করা, চোখে ঝাপসা দেখা, শরীরের বিভিন্ন অংশের কাটাছেঁড়া সহজে না শুকানো, কোনো
কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া, প্রদাহজনিত রোগে বারবার আক্রান্ত হওয়া, হাত-পায়ে ব্যথা বা মাঝেমধ্যে অবশ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
অনেক ক্ষেত্রে এসব লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। প্রতি দু’জন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে একজন জানেনই না যে তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এটিই হচ্ছে ভয়ানক বিপদের কথা। কারণ, ডায়াবেটিসের জটিলতাগুলো রোগের প্রাথমিক ধাপ থেকেই শুরু হয়। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও জটিলতা প্রতিরোধের অন্যতম পূর্বশর্ত।
তাই জেনে নিন ডায়াবেটিসের কোনো লক্ষণ না থাকলেও কাদের ডায়াবেটিস পরীক্ষা
করা উচিত–
১. বয়স ৪৫ বা এর বেশি হলে
২. স্থূল ব্যক্তি
৩. রক্ত সম্পর্কিত নিকটাত্মীয়ের ডায়াবেটিস থাকলে
৪. শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতি
৫. প্রি-ডায়াবেটিস থাকলে
৬. নারীদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা অতিরিক্ত ওজনের সন্তান প্রসবের পূর্ব ইতিহাস
৭. পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম থাকলে
৮. উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক হলে
৯. রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেশি এবং এইচডিএলের মাত্রা কম থাকলে।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সময়মতো ডায়াবেটিস নির্ণয় না হলে বেশি ওজনের শিশু জন্মদান, অকাল গর্ভপাত, মৃত সন্তান প্রসব, প্রসব-পরবর্তী শিশুমৃত্যু, জন্মগত ত্রুটি বা প্রসব-পরবর্তী মা ও সন্তানের বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। তাই প্রথম চেকআপের সময় অথবা গর্ভধারণের ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহে প্রত্যেক অন্তঃসত্ত্বা মায়ের ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ পরীক্ষা করতে হবে।
লেখক: বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক




আর্কাইভ