স্থূলতা বা ওবেসিটি হলো শরীরের এমন একটি অবস্থা, যে অবস্থায় শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়। হিপোক্রেটিস বলেছেন, স্থূলতা অবশ্যম্ভাবীভাবে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর দুর্যোগপূর্ণ পরিণতি বয়ে আনে। এ অবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত স্নেহ বা চর্বিজাতীয় পদার্থ জমা হয় এবং স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ফলে আয়ু কমে যেতে পারে এবং একই সঙ্গে শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) হলো শরীরের উচ্চতা ও ওজনের আনুপাতিক হার; যা দিয়ে বোঝা যায়, কোনো ব্যক্তি মাত্রাতিরিক্ত ওজনবিশিষ্ট (মরবিড ওবেসিটি) কিনা। যদি কারও বডি মাস ইনডেক্স ২৫ কেজি/মি ২ থেকে ৩০ কেজি/মি ২-এর মধ্যে থাকে, তখন তাকে স্থূলকায় বা মোটা বলা যেতে পারে। আর যখন বডি মাস ইনডেক্স ৩০ কেজি/মি ২-এর বেশি থাকে, তখন তাকে অতি স্থূলকায় বা অতিরিক্ত মোটা বলা হয়।
স্থূলতা এমন একটি রোগ, যা বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। তবে রোগটি অবশ্যই প্রতিরোধযোগ্য। স্থূলতার কারণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা থাকে। মূল সমস্যার পাশাপাশি আরও কিছু সমস্যা দেখা দেয়, যেমন– মেটাবলিক সিনড্রোম বা কার্ডিওভাস্কুলার রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে বেশি কোলেস্টেরল ও উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
দৈহিক স্থূলতার কারণ
• পরিমাণে বেশি বা বেশি ক্যালরিসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ।
•শ্রমবিমুখ বা কম পরিশ্রম করা; জিনগত এবং বংশগত কারণ শিশু বয়সের স্থূলতা।
শিশুর বয়স ও লিঙ্গের সঙ্গে বডি মাস ইনডেক্সের (বিএমআই) ক্রমবিন্যাস ওঠানামা করে। বিএমআইর ৯৫তম পার্সেন্টাইলে শিশু এবং বয়ঃসন্ধিকালের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্থূলতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়।
প্রাপ্তবয়স্কদের স্থূলতার পাশাপাশি শিশু বয়সের স্থূলতার হার বাড়ার সঙ্গে বহু বিষয় জড়িয়ে আছে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও শারীরিক কসরত কমে যাওয়াকেই সাম্প্রতিককালে এই হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে প্রধান দুটি কারণ বলে মনে করা হয়। শিশু বয়সের স্থূলতা অসংখ্য কঠিন ব্যাধিকে সঙ্গী করে বাড়তি বয়সেও প্রায়ই থেকে যায়। ভীষণ মোটা গোছের শিশুদের পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাদের অধিকাংশই হাইপারটেনশন (উচ্চ রক্তচাপ), ডায়াবেটিস, হাইপার লিপিডেমিয়া ও চর্বিযুক্ত লিভারের শিকার। এসব শিশুর লাইফস্টাইল ও আচরণ প্রণালির আমূল পরিবর্তন না করা গেলে রোগমুক্তির কথা চিন্তা করা যাবে না।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।