বাংলার-পৃথিবীঃ কোন বয়সে কী ধরনের পুষ্টির চাহিদা থাকে তা জানা দরকার। যেমন–
শিশুর পুষ্টি
শিশু জন্মের প্রথম ছয় মাস মায়ের দুধ পান করাতে হবে। শিশুকে মায়ের প্রথম যে দুধ দেওয়া হয় তাকে শালদুধ বা কোলোস্ট্রাম বলে। এরপর থেকে শিশুকে নতুন খাদ্যে অভ্যস্ত করাতে হবে। প্রথমে তরল খাবার যেমন– বিভিন্ন ফলের রস, সবজির পাতলা স্যুপ ইত্যাদি দিতে হবে। তার পর তরল খাবার কিছুটা ঘন করে দিতে হবে। এ সময় ভাত, ডাল, সবজি ব্লেন্ড করে দেওয়া যাবে। ধীরে ধীরে নরম খাবারের অভ্যাস করাতে হবে। এ সময় নরম সেদ্ধ মাছ, নরম ভাত, ডিমের কুসুম দেওয়া যাবে। দুধ-সুজিও দেওয়া যাবে। শিশুর অন্যতম পরিপূরক খাবার হলো খিচুড়ি। পরীক্ষায় দেখা গেছে, যদি খাদ্যশস্য ও ডালের পরিমাণ ৫ : ১ অনুপাতে থাকে, তাহলে এদের মিলিত প্রোটিন দেহ গঠনে বিশেষ সহায়তা করে। সুতরাং খিচুড়ি একটি পুষ্টিকর ও উপাদেয় খাবার। এটি রান্নার সময় সামান্য তেল, সবজি ও ছোট মাছ কেটে দেওয়া যেতে পারে।
কৈশোরের পুষ্টি
কৈশোরে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে বলে এ সময় সুষম খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এ জন্য খাবারে থাকতে হবে আমিষ, শর্করা, চর্বি, খনিজ লবণ ও ভিটামিনযুক্ত খাবার।
মেয়েদের ক্ষেত্রে রক্তস্বল্পতার ঘাটতি প্রায়ই হয়ে থাকে। এ কারণে আয়রনের জন্য তাদের নিয়মিত ডিম, মাংস, কলিজা, সামুদ্রিক মাছ, সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। এ ছাড়া ক্যালসিয়ামের জন্য দুধ খাওয়া প্রয়োজন। কিশোরদের খেলাধুলা, বাইরে ছোটাছুটির জন্যও প্রোটিন-ভিটামিন ও আয়রন বা লৌহের দিকে নজর দিতে হবে। প্রতিদিন একটি ডিম তাদের দেহ গঠন ও কর্মক্ষমতার জন্য প্রয়োজন। মধ্য বয়সের মানুষের কাজের পরিধি বেড়ে যায়। এ কারণে তাদের শক্তির প্রয়োজন। এজন্য ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’যুক্ত খাবার খেতে হয়। এ বয়সে এ দুটি খাদ্য উপাদানের অভাবে হাড়ের রোগ দেখা যায়। হাড় সহজেই ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
বার্ধক্যে পুষ্টি
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতায় ভুগে থাকেন। হজমশক্তিও কমে যায়। এ কারণে বয়স্কদের গুরুপাক ও বেশি তেল-মসলাযুক্ত খাবার তাদের না খাওয়াই ভালো। বয়স্ক ব্যক্তিদের উপযোগী খাবার হলো– নরম খিচুড়ি, দুধ বা দই দিয়ে চিড়া, মুড়ি, স্যুপ, দুধ-রুটি, পাতলা ডাল-রুটি, দুধ-সাগু, দুধ-সুজি ইত্যাদি। এছাড়া ফলের রস, পুডিং, হালুয়া, কাস্টার্ড খাওয়া যেতে পারে।
লেখক: প্রাক্তন অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান পুষ্টি বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল