কৃষিতে সৃজনশীলতার অন্যন্য অবদানের জন্য ICALDRC Linguistics Unit of Dhaka University কৃষক সুমন আহম্মেদকে The International Creative Arts Award -2023 (আন্তর্জাতিক সৃজনকলা পুরষ্কার ২০২৩ ) প্রদান করেছে । ২রা ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত Discussion on “Impact of Language & Literature on Enriching Minds and Inspiring Lives & The International Creative Arts Award-2023 Giving Ceremony “. অনুষ্ঠানে এই পদক ও সম্মাননা সনদ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড: মো: আবু নঈম শেখ, কী নোট স্পীকার ছিলেন ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউ,এস,এ এর অধ্যাপক নেছার ইউ আহমেদ( Fulbright scholar, US Public Diplomacy), বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্রে আজীবন সম্মাননা প্রাপ্ত নাট্যশিল্পী ডলি জহুর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড: একেএম শাহনেওয়াজ এবং The International Creative Arts Language & Development Research Centre ( ICALDRC) এর মহাসচিব অধ্যাপক লুৎফর রহমান জয়।
অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড: আসাদুজ্জামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ICALDRC ভাষাতত্ব ইউনিট বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা, সাহিত্য প্রকাশনা, পরিবেশনা শিল্প, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জীবনঘনিষ্ঠ নন্দনশৈলীকে প্রত্যায়ন করে সৃজনশীলতার এই পদক ও সম্মাননা প্রদান করেছে।
সুমন আহম্মেদের নিজের জীবনকথা এখানে তুলে ধরা হলো। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং বর্তমানে সবার কাছে তার এই নিজের অনুভূতি ও তথ্য যেন অনুপ্রেরণা যোগায়ঃ
আমার কর্মজীবন শুরু হয় সেই ছোটবেলা থেকেই, যে বয়সে একটা বালক লাটিম,ঘুড়ি নিয়ে খেলা করে ঠিক সেই বয়সে আমি বাবার সাথে ক্ষেতে কৃষিকাজ করতাম পাশাপাশি লেখা পড়াও করতে হয়েছে।
অভাব অনটনের মাঝেই কেটেছে আমার শৈশব ও কৈশোরের এক পর্যায় জীবিকার কারণে প্রবাসে যেতে হয়। আমি প্রবাসে গিয়েও অন্তরের মাঝে পোষণ করতাম কৃষিকাজ। কাজের শেষে যতটুকু সময় পেতাম ঘুরে বেড়াতাম কৃষকদের কাছে, মাইলের পর মাইল আমি হেঁটে বেড়াতাম কৃষকদের ক্ষেতে। পৃথিবীর প্রায় ২০ টি দেশের নানা মুখী কৃষি কাজের উপর সাধারণ জ্ঞান আমি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।
আমি জীবিকার কারণে প্রবাসে থাকলেও মনটা পড়ে থাকতো বাংলাদেশে কোন না কোন কৃষি খামারে। এক সময় আমার স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে আমাকে চলে আসতে হয় বাংলাদেশে। স্ত্রীর দুটো কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে আমি সকল টাকা পয়সা ফুরিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ি।
অবশেষে উপায়-অন্ত না পেয়ে আবার যখন বিদেশে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়েছি ঠিক তখনই আমার স্ত্রী যিনি মৃত্যুর সাথে লড়াই করা অবস্থায় আমাকে অনুরোধ করেছিল আমি যেন বিদেশে না যাই এবং আমি যেন আমার সারা জীবনের স্বপ্ন কৃষি-কাজ শুরু করি এবং তার মৃত্যুর সময় তার কাছে থাকি।
আমার স্ত্রী কথা রাখতে গিয়ে আমি যখন কৃষিকাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করি ঠিক তখন প্রধান বাধা হয়ে দাড়ায় আমার আর্থিক সংকট, টাকার জন্য অনেকের কাছে গিয়েছি কেউ আমাকে সাপোর্ট করেনি। অবশেষে আমি বাধ্য হয়ে আমার অসুস্থ স্ত্রীর গলার একটা চেইন চুরি করে ৬৬ হাজার টাকায় বিক্রি করি এবং আমার উপজেলার এক মৎস্য কর্ম কর্তার সহায়তায় প্রথম ছোট একটা কৃষি খামার গড়ে তুলি এবং পুঁজি হিসেবে আমার সেই বিদেশে ট্রেনিং নেওয়া ও মাত্র ৬৬ হাজার টাকা সম্বল দিয়ে আমি কৃষি কাজ শুরু করি।
২০২০ সালে আমি এই আধুনিক কৃষি শুরু করি, প্রথম বছরেই আমি সাফল্যের দুয়ারে আসতে পেরেছি। পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়েও আমার দেশের মাটি অনেক উর্বর এবং কৃষির জন্য অনেক ভালো বিধায় আমার আর পিছনে তাকাতে হয় নি।
আজ আমি মাত্র তিন/চার বছরেরই খুঁজে পেয়েছি সাফল্যের সেই স্বপ্নের দরজা।
আমি এই ৩/৪ বছরেরই প্রায় কয়েক শত বেকার ও অবসর প্রাপ্ত লোকদেরকে কৃষিতে সাফল্যে এনে দিতে পারছি।
আমার স্কুলে ও পরামর্শদাঙ্কেন্দ্রে কৃষি কাজ আধুনিক ভাবে শিখানোর ব্যবস্থা করেছি।
আমার স্বপ্ন আছে বাংলাদেশের অনেক ঘরে আমি যেন এই আধুনিক কৃষি কাজ পৌঁছে দিতে পারি। আজ আমি যে কাজের স্বকৃীতি হিসেবে পুরুষ্কার পেয়েছি তা বাংলার সকল কৃষকদের মাঝে উৎসর্গ করলাম।
আমি বিশ্বাস করি অচিরেই বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষিত লোকেরা কৃষি কাজকে প্রধান্য দিবে ইনশাআল্লাহ।
নিচের ছবিতে ক্লিক করে শুনুন কৃষক সুমন আহম্মেদের কথাঃ