শিশুর লিভারের রোগগুলোকে হেপাটাইটিস নামে অভিহিত করা হয়।
হেপাটাইটিস
হেপাটাইটিস হলো লিভারের প্রদাহ। এই প্রদাহ দুই ধরনের– ক্ষণস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী। ভাইরাস এ, বি, সি, ডি এবং ই দিয়ে মূলত হেপাটাইটিস ছড়ায়।
হেপাটাইটিসের লক্ষণ
হেপাটাইটিসে আক্রান্ত শিশুর লক্ষণঘুরেফিরে প্রায় একই রকম। পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা, দুর্বলতা, স্বল্প জ্বর, হাত-পা চুলকানো ইত্যাদি। পরবর্তী সময়ে পানি জমে পেট ফুলে যাওয়া, রক্ত বমি, আলকাতরার মতো কালো পায়খানা, এমনকি শিশু অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
আক্রান্ত শিশুর রক্ত পরীক্ষা করলে হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত কিনা, তা বোঝা যায়। রক্তে বিলোরুবিনের মাত্রা দেখার পাশাপাশি লিভার এনজাইমের মাত্রা দেখার প্রয়োজন হয়। শিশুটি কোন ভাইরাসে আক্রান্ত, তা দেখার জন্য রক্তের আলাদা পরীক্ষা করতে হয়। রক্তের অ্যামোনিয়া মেপে শিশুর অজ্ঞান হওয়া সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। খাদ্যনালির এন্ডোসকপি ও পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করে লিভার রোগের তীব্রতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কখনও কখনও লিভারের অবস্থা জানতে বায়োপসি করা হয়।
চিকিৎসা
শিশুকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। পর্যাপ্ত প্রোটিনের সঙ্গে ফলমূল দেওয়া যাবে। অল্প লবণ দিয়ে রান্না করা খাবারের সঙ্গে পরিমিত পানি শিশুর পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে। এ সময় অল্প সেদ্ধ করা হলুদ ছাড়া খাবার, ডাবের পানি, আখের রস, শিং মাছের ঝোল– এসব খাবারের বিশেষ কোনো ভূমিকা নেই। পায়খানা বন্ধ থাকলে নিয়মিত ল্যাকটুলোজ সিরাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। লিভার যদি রক্ত জমাট বাঁধার প্রভাবক ভিটামিন-কে তৈরি করতে না পারে, তাহলে ভিটামিন-কে ইনজেকশন দেওয়া হয়। পেটে পানি এলে, শরীর ফুলে গেলে, শরীর থেকে পানি বের করার ট্যাবলেট খাওয়ানো হয় এবং এই পানির জন্য ইনফেকশন হতে পারে বলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের প্রয়োজন হয়। দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিসের জন্য ইন্টারফেরন ইনজেকশন এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে ওষুধ প্রয়োগ করে চিকিৎসা করা যেতে পারে।
শিশুকে কখন হাসপাতালে ভর্তি করাবেন
বারবার বমি হলে, রক্তে বিলোরুবিনের মাত্রা খুব বেড়ে গেলে, রক্তে চিনি ও পটাশিয়ামের মাত্রা কমে গেলে, শিশু অজ্ঞান হয়ে পড়লে দেরি না করে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
প্রতিরোধ
এ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রধান উপায় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, অর্থাৎ টিকা নেওয়া। তাই হেপাটাইটিস-এ ও হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতে হবে প্রত্যেককে।
লেখক : অধ্যাপক, শিশু বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ও কনসালট্যান্ট, আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড।