বাংলার-পৃথিবীঃ সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক আগের দেনা শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। নতুন করে এলসি খোলায় অধিক সতর্কতা দেখাচ্ছে। এ অবস্থায় রেমিট্যান্সে ডলার কেনার দর তদারকিতে কিছুটা শিথিলতা দেখাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদা ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দর ঠিক করলেও দেশভেদে প্রবাসীদের থেকে ১২২ টাকার বেশিতেও ডলার কেনা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দরে কেনা হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। এর ফলে রেমিট্যান্স আহরণে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে এখন শীর্ষে উঠে এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফেডারেল এক্সপ্রেস নামের এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো প্রতি দিরহাম ৩৩ টাকা ৩৫ পয়সায় কিনেছে। এদিন ৩ দশমিক ৬৭ দিরহামে পাওয়া গেছে এক ডলার। এর মানে, দেশটি থেকে প্রতি ডলার কিনতে হয়েছে ১২২ টাকা ৩৯ পয়সায়। দেশটির আল-আনসার এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে গতকাল প্রতি ডলার ১২১ টাকা ৭০ পয়সায় কিনতে হয়েছে। দেশটির বেশির ভাগ এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে অন্য সব দেশের তুলনায় বেশি দরে ডলার কিনছে ব্যাংকগুলো। এখন সবচেয়ে বেশি দরে ডলার কিনছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স কিনছে ১১৫ থেকে ১১৯ টাকা পর্যন্ত দরে। যে ব্যাংক যে রকম দরে ডলার কিনছে, বিক্রি করছে তার চেয়ে ১ টাকা বেশি দরে। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এবিবি ও বাফেদা নির্ধারিত দরই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রিপোর্ট করছে ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বৈধ চ্যানেলে এখন সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৬৮৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১১৫ কোটি ডলার এসে দেশটির অবস্থান এখন শীর্ষে। গত অর্থবছর পর্যন্ত দেশটির অবস্থান ছিল তৃতীয়। এর আগে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষে থাকা সৌদি আরব থেকে ১০৭ কোটি ডলার এসেছে। দেশটির অবস্থান এখন দ্বিতীয়। আগে চতুর্থ অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্যের অবস্থান এখন তৃতীয়। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৮২ কোটি ডলার। আর গত অর্থবছর পর্যন্ত দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭০ কোটি ডলার এসে এখন অবস্থান দাঁড়িয়েছে চতুর্থ। আগে ৯ নম্বরে থাকা ওমানের অবস্থান এখন পঞ্চম। প্রথম চার মাসে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ কোটি ডলার।
বিভিন্ন উদ্যোগের পরও ডলার দর নিয়ন্ত্রণ ও রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের দর ঠিক করে আসছে ব্যাংকগুলো। শুরুতে রেমিট্যান্সে ১০৮ এবং রপ্তানিতে ৯৯ টাকা করা হয়। পর্যায়ক্রমে উভয় ক্ষেত্রে ডলার কেনার দর অভিন্ন করা হয়েছে। চলতি মাস থেকে প্রতি ডলারে ৫০ পয়সা বাড়িয়ে রেমিট্যান্স ও রপ্তানিকারকদের থেকে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় কিনে আমদানিকারকদের কাছে সর্বোচ্চ ১১১ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনেক ব্যাংক এ দর মানে না। ঘোষণার চেয়ে বেশি দরে ডলার কেনাবেচা করায় গত মাসে ১০ ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানকে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবশ্য পরে বাংলাদেশ ব্যাংক শক্ত অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম বলেন, সব ব্যাংক নির্ধারিত দরে ডলার কিনবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কেউ না মানলে আমাদের কিছু করার নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটা দেখবে।
ডলারের দর নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এরই মধ্যে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো বিক্রি করা হয়েছে। এদিকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময়ের এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় বাবদ গতকাল ১১১ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। গত বৃহস্পতিবার রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের আগস্টে ডলারের রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়নের ঘর ছাড়িয়েছিল।