বাংলার-পৃথিবীঃ বিশ্বকাপ শেষে প্রতিটি আন্তর্জাতিক দলের কোচিং স্টাফে কিছু না কিছু পরিবর্তন আসে। ওয়ানডে বিশ্বকাপ শেষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচিং স্টাফেও বড় ধরনের পরিবর্তন হতে পারে। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও সহকারী কোচ নিক পোথাস ছাড়া অন্যদের ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বিসিবির একজন কর্মকর্তা জানান, পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড, স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ, ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডারমট ও ট্রেনার নিকোলাস লি, ভিডিও অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরনের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিসিবির সঙ্গে তাদের চুক্তি শেষ হবে এ বছর ৩০ নভেম্বর।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে বিদেশি কোচিং স্টাফ কাজ করেন সাতজন (স্থায়ী)। তাদের মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো হলেন পারফরম্যান্স অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাস। ২০১৮ সাল থেকে জাতীয় দলের সঙ্গে রয়েছেন তিনি। ভারতীয় এ পারফরম্যান্স অ্যানালিস্টের সঙ্গে তিন মেয়াদে চুক্তি নবায়ন করেছে বিসিবি। বাংলাদেশ দলে কাজ করার পাশাপাশি আইপিএলেও কাজ করেন তিনি। গত পাঁচ বছর ভালো করলেও সম্প্রতি ক্রিকেটারদের ‘গুডবুক’ থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছেন শ্রীনিবাস। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চললেও তাঁকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে বোর্ডের আগ্রহ কম। সম্ভাব্য বিদায়ী কোচিং স্টাফের মধ্যে হাথুরুসিংহের অপছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন ডোনাল্ড। অভিযোগ রয়েছে, পেস বোলারদের উন্নতিতে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না তিনি। বিসিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ডোনাল্ড মেন্টর হিসেবে ভালো, কোচ নন। তিনি বোলারদের হাতে-কলমে কিছুই শেখাতে পারেননি। পরিস্থিতি অনুযায়ী পেস বোলারদের টিপস দেন।’ ম্যাচ চলাকালে মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে তাসকিনদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে। পেস বোলারদের আসল উন্নতিটা হয়েছে মূলত অটিস গিবসনের সময়ে। স্কুলশিক্ষকের মতো হাতে ধরে শেখাতেন তিনি। অটিসকে পেলে হাথুরুসিংহে খুশিই হতেন। সেখানে ডোনাল্ডের কাজে একেবারেই খুশি নন তিনি। স্পিন কোচ হেরাথের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হলেও বিসিবি চায় নতুন সেটআপ নিয়ে এগোতে।
প্রধান কোচ হাথুরুসিংহের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে ২০২৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। সহকারী কোচ নিক পোথাসের নিয়োগ দুই বছরের জন্য। এ দক্ষিণ আফ্রিকানের কাজ নিয়ে আপত্তি নেই প্রধান কোচের। বিসিবির একটি সূত্রে জানায়, বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর চুক্তি নবায়নের বিষয়ে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস ও সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন কোচরা। ধর্মশালা পর্বের খেলা শেষে ডোনাল্ডদের জানিয়ে দেওয়া হয়, চুক্তি নবায়নে আগ্রহী না বোর্ড! এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে জালাল ইউনুসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিসিবির এ পরিচালক বলেন, ‘বিষয়টি খুবই অফিসিয়াল, মন্তব্য করা যাবে না।’ গতকাল কলকাতা থেকে ফোন করে পাওয়া যায়নি তাঁকে। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজনের কাছে ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে মেসেজ দেওয়া হলে কোনো উত্তর দেননি তিনি। ২০২১ সালের টি২০ বিশ্বকাপ থেকে বিদেশি কোচিং স্টাফের নিয়োগ নিয়ে কিছুটা ঝামেলা হচ্ছে। সাবেক প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো সেবার কৌশল খাটিয়ে চুক্তি নবায়ন করেছিলেন কঠিন শর্ত জুড়ে দিয়ে। জাতীয় দলের বর্তমান কোচিং স্টাফের বেশির ভাগের চুক্তি নভেম্বর পর্যন্ত হওয়ায় বিশ্বকাপ শুরুতে চুক্তি নবায়নের বিষয়টি উত্থাপন করেন। বোর্ডের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় গা-ছাড়া দিয়েছেন তাদের অনেকে। বিশ্বকাপে দলের পারফরম্যান্সে যেটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিসিবির সাবেক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি মনে করি, গত তিন বছরের অভিজ্ঞতা থেকে কোচদের সঙ্গে কৌশলে চুক্তি করা উচিত বোর্ডের। আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টের পরপর চুক্তি শেষ না হলে ভালো। এ ছাড়া কোচিং প্যানেলের সদস্যদের চুক্তির মেয়াদ ভিন্ন ভিন্ন বছরে হলে বেশি ভালো হয়।’ গত তিন বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিদেশি কোচদের সঙ্গে চুক্তি করার ক্ষেত্রেও কৌশলী হতে পারে বিসিবি।