বাংলার-পৃথিবীঃ সাকিব আল হাসান ও অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে কিছুটা মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে বিশ্বকাপে আসার পর। পেস বোলিং কোচের সঙ্গে অধিনায়কের মতের মিল হচ্ছে না। ভারতের কন্ডিশন পর্যালোচনা করে সাকিব চান একাদশে স্পিনার বেশি রাখতে। পেস বোলার খেলাতে চেয়েছেন দু’জন করে। এই জায়গাতেই আপত্তি ডোনাল্ডের। তিনি চান বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচে তিনজন করে পেস বোলার খেলাতে। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকেও বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন।
ফলে একাদশে বোলিং লাইনআপ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরোপুরি স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে না সাকিবকে। যদিও অধিনায়ক বিষয়টি নিয়ে তিক্ততা তৈরি করতে চাননি। এ কারণে কোচিং স্টাফের কিছু সিদ্ধান্ত মেনেও নিয়ে দল চালাচ্ছেন।
ভারতের কন্ডিশন পেস বোলিং উপযোগী না হলেও ১৫ জনের স্কোয়াডে পাঁচজন পেসার নেওয়া হয়েছে। বিশ্বকাপ সুপার লিগে পেসাররা ভালো করায় ধারণা করা হয়েছিল বিশ্বকাপেও বাজিমাত করবেন। অথচ বিশ্বকাপে ইউনিট হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচ খেলতে পারেননি পেসাররা।
ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের অনুকূল কন্ডিশনে আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাওয়ার প্লেতে ব্রেকথ্রু দিতে পারেননি তাসকিন আহমেদরা। আফগানদের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে মিডলওভারে কিছুটা বারুদ ছড়াতে পারলেও ইংলিশদের বিপক্ষে ছিল হতাশ করা। ৪০ ওভার পর্যন্ত পেসারদের কাছ থেকে সেভাবে সাপোর্ট পায়নি দল। শেষের ১০ ওভারে গিয়ে শরিফুল ইসলাম রোমাঞ্চ ছড়ান। স্পিনার শেখ মেহেদী তিনটি উইকেট নিলে ততক্ষণে ইংল্যান্ড ৩৬৪ রান তুলে জয়ের ভিত গড়ে ফেলেছিল। স্কোর বোর্ডে প্রতিপক্ষের বিশাল রান দেখে হতাশ হয়ে পড়েন ব্যাটাররা।
ওখানেই শেষ নয়, চেন্নাইয়ে নিউজিল্যান্ড, পুনেতে ভারতের বিপক্ষে চরমভাবে ব্যর্থ টাইগার পেস ইউনিট। এভাবে হতাশ করা পারফরম্যান্সের কারণ জানতে চাওয়া হলে পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড ফোনে বলেন, ‘বিশ্বকাপের আগে আমরা খুব ভালো করেছি। ভারতে তেমনটা করতে পারছি না। কারণ হলো খুবই ফ্ল্যাট উইকেটে খেলা হচ্ছে। পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড সাড়ে তিনশ রান চেজ করছে। এর মানে হলো তাদের পেসাররাও ভালো করতে পারছেন না। আসলে উপমহাদেশে কন্ডিশন পেসারদের অনুকূল না। মিরপুর, সিলেট বা চট্টগ্রামের মতো ভারতের উইকেটেও ভালো করা চ্যালেঞ্জিং। জিততে হলে রান করতে হবে। চেজ করতে হবে বড় স্কোর। আমরা অনেক আলোচনা করছি বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বের হতে। বোলাররা আরও কিছুটা আক্রমণাত্মক হলে হয়তো ভালো হবে। সামনের ম্যাচগুলোর জন্য একটা উপায় খুঁজে বের করতেই হবে আমাদের।’
সবচেয়ে খারাপ দিক হলো পেসাররা উইকেট নিতে তো পারছেনই না, রান খরচও করছেন দরাজ হাতে। ফলে প্রথম দুই ম্যাচে আগে বোলিং নিলেও পরের দুই ম্যাচে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। সেখানে সুবিধা করতে পারেনি। ব্যাটাররাও ভালো করতে পারছেন না। ফলে আড়াইশ রানের দল হয়ে পড়ে
বিশ্বকাপের মাঠে যেটা মাঝারি মানের স্কোর। বিশ্বমানের দলের বিপক্ষে এই রান ডিফেন্ড করার মতো বোলার দলে নেই। বিশেষ করে পেস বোলিং ইউনিট ক্লিক না করায় বড় ব্যবধানে হারতে হয়েছে টানা তিন ম্যাচে। কিন্তু সাকিবের পরিকল্পনা মেনে নিয়ে স্পিনার বেশি খেলালে ভালো কিছু হলেও হতে পারত।
সাকিব, মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে শেখ মেহেদী খেললে সমন্বিত আক্রমণ হতে পারত। মুম্বাই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দু’জন পেস বোলার খেলাতে পারে। টানা তিন হারের পর ডোনাল্ডও কিছুটা নমনীয় হয়েছেন।
পেস বোলিং এ কোচের কাছে ফোনে পরবর্তী ম্যাচের পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘পুরোটাই সাকিবের ওপর নির্ভর করছে। কারণ মুম্বাইয়ের মাঠ একটু ছোট। কাল (আজ) ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দেখার পর বুঝতে পারব আমাদের কী করা উচিত।’ ডোনাল্ড আর হাথুরুসিংহে হয়তো বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারছেন। সাকিবের পরিকল্পনাকেই মেনে নিতে পারেন তারা।