বাংলার-পৃথিবীঃ মেডিকেল বিভাগের পরিষ্কার বার্তা– ভালো আছেন সাকিব। পেশিতে টিস্যু ছিঁড়েছে– তেমন কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি অফিসিয়াল মেইলেও। এদিক থেকে দেখলে সাকিবের ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলায় সমস্যা নেই। টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনও গতকাল পুনের টিম হোটেলের ব্রিফিংয়ে জানান, খেলতে চান সাকিব। অর্থাৎ নিজেকে ফিট মনে করছেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার। তবে বাংলাদেশ অধিনায়কের পরের ম্যাচে খেলা-না খেলার বিষয়টি তাঁর একক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে না। তিনি নেটে ব্যাটিং-বোলিং করে দেখবেন কতটা স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। অনুশীলন শেষে চোটমুক্ত নিশ্চিত হওয়ার জন্য এমআরআই করা হবে। স্ক্যান রিপোর্ট দেখে বাকি সিদ্ধান্ত নেবে দলের মেডিকেল টিম। সে ক্ষেত্রে ভারতের বিপক্ষে সাকিবের ম্যাচ খেলা-না খেলার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে। অর্থাৎ অফিসিয়ালি হয়তো ম্যাচের আগের দিন নিশ্চিত করা হবে সাকিব খেলবেন কিনা।
চেন্নাইয়ে এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং করার সময় বাঁ-ঊরুর সামনের পেশিতে (কোয়াড্রিসেপ) অস্বস্তি বোধ করেন সাকিব। মাঠেই শুশ্রূষা নিয়ে ব্যাটিং চালিয়ে যান। পুরো সময় মাঠে থেকে ফিল্ডিং করার পাশাপাশি ১০ ওভার বোলিংও করেন। ম্যাচ শেষ করে হাসপাতালে গিয়েছিলেন এমআরআই করাতে। শনিবার এমআরআই রিপোর্ট পেলেও দল থেকে পরিষ্কার কিছু বলা হয়নি। অফিসিয়াল মেইলে ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম চোট ইস্যুতে পরিষ্কার করে কিছু লেখেননি। সাকিবের ফিটনেস পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে তাতে। প্রতিদিন উন্নতি পরখ করে দেখা হবে বলেও লেখা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাকিব ভালো থাকায় মেডিকেল টিমকে কিছু করতে হয়নি। এ ব্যাপারে হোয়াটসঅ্যাপে সাকিবকে বার্তা দেওয়া হলে মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন। এটা হয়তো রহস্য রেখে দেওয়ার কৌশল। প্রতিপক্ষকে ধাঁধায় রাখতে কৌশলটি নেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ দল চেন্নাই থেকে পুনে আসার পর গত দু’দিন অনুশীলন করেনি। টানা তিন দিন বিশ্রামে ছিলেন বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার। দল সূত্রে জানা গেছে, টাইগার দলপতির স্বাভাবিক চলাফেরায় সমস্যা দেখতে পাননি কেউ। এর অর্থ এই নয়, সাকিব খেলার জন্য পুরোপুরি ফিট। টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। তাঁর মতে, ‘সাকিব ভালোর দিকে। ব্যথামুক্ত আছে। এখনও যেহেতু মাঠে নামেনি, পুরো চিত্রটা বলা যাবে না। কালকে নেটে ব্যাটিং করবে। রানিং বিটুইন দ্য উইকেট করবে হয়তোবা। করলে বোঝা যাবে। আমরা আশাবাদী এই ম্যাচে ওকে পাব। আমাদের ধারণা সে খেলতে পারবে।’ যদিও সুজনের পরের বক্তব্য বিভ্রান্ত হওয়ার মতো। তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু মেডিকেল ইস্যু আছে, টিআর আছে পায়ে। আজ সুইমিংয়ের কিছু কাজ ছিল। আপার পার্টে জিম ছিল। কাল মাঠে ব্যাটিংয়ের পর স্ক্যান করা হবে। তখন বুঝতে পারব এবং পরিষ্কার একটা চিত্র পাওয়া যাবে।’
বিসিবির অফিসিয়াল মেইলে ফিজিও বায়েজিদুল ইসলামের বক্তব্যে টিআর উল্লেখ না থাকলেও সুজন টিআর থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। চিকিৎসকরা টিআর নির্ণয় করেন গ্রেড ওয়ান, গ্রেড টু বা গ্রেড থ্রিতে। পেশি সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হলে বলা হয় গ্রেড ওয়ান টিআর। এই সামান্য চোটমুক্ত হতেও দুই থেকে তিন সপ্তাহ বিশ্রাম দেওয়া হয়। সুজন বলেননি, সাকিবের টিআর কোন গ্রেডে! যেটা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টরা। সুজনের মতে, ‘যেহেত টিআরের ব্যাপার, ব্যথা থাকতেই পারে। মাসলে যেহেতু চোট পেয়েছে, টিআর থাকবেই। কতটা রিকভারি হয়েছে, এটা দেখতে হবে। এটা (এ ধরনের চোটে) হাঁটলেও ব্যথা হয়। সাকিবের সে রকম কিছুই নেই। এ জন্য আমরা আশাবাদী। তবে আস্তে হাঁটা ও মাঠে দৌড়ানোর মধ্যে পার্থক্য আছে। যেহেতু গত ম্যাচে রান নিতে গিয়ে ব্যথাটা পেয়েছিল। কালকে (আজ) হয়তো ওগুলো দেখবে।’
ফিজিশিয়ানদের ভাষায়, অনেক সময় পেশি দুর্বল হলে ব্যথা করতে পারে। এমআরআই স্ক্যানেও তাতে সমস্যা ধরা পড়ে না। সে ক্ষেত্রে খেলোয়াড়কে ফিটনেস পরীক্ষা দিয়ে শারীরিক কন্ডিশন বুঝে নিতে হয়। পেশিতে ব্যথা হলে ম্যাচ খেলা থেকে বিরত থাকতে বলা হয় বলে ঢাকা থেকে ফোনে জানান বিসিবির একজন ফিজিও। তিনি বলেন, ‘সাকিবের ঊরুর পেশিতে গুপ্ত চোট থাকলেও থাকতে পারে। মেডিকেলি যেটা চোট না, কিন্তু বেশি লোড পড়লে টিআরের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।’ এসব বিবেচনায় রেখে শতভাগ ফিট সাকিবকে খেলাতে চায় বিসিবি। সুজনের বক্তব্যেও সেটা পরিষ্কার, ‘গত ম্যাচে চোট পাওয়ার পরও ব্যাটিং করেছে, পুরো ১০ ওভারের বোলিং করেছে। যদি সে রকম হয়, সে নিজে যদি স্বচ্ছন্দ বোধ করে, সাকিব নিজে চাইছে খেলতে। তবে নির্ভর করে ওর শতভাগ ফিটনেসের ওপর।’ টিম ম্যানেজমেন্টের এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণও রয়েছে। এক ম্যাচ খেলিয়ে সাকিবকে বিশ্বকাপ থেকে হারাতে চায় না। সুজনের মতে, প্রয়োজনে ভারতের বিপক্ষে বিশ্রামে রেখে বাকি পাঁচ ম্যাচে দেখতে চান সাকিবকে। টাইগার অধিনায়ক সত্যিই চোটাক্রান্ত হলে জাতীয় দলের মেডিকেল দলের কাছ থেকেও অনুরূপ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভারতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে একাদশে পরিবর্তন করতে হবে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে স্ট্যান্ডবাই থাকতে হবে খেলার জন্য। ছোট করতে হবে ব্যাটিং লাইনআপও। নেতৃত্বেরও হাত বদল হবে। সহ-অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত লিড দেবেন। এই বিষয়গুলোর জবাব পেতে তাই অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।