রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক রেখেই রাশেদকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করল গণ অধিকার পরিষদ

প্রথম পাতা » এক্সক্লুসিভ » রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক রেখেই রাশেদকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করল গণ অধিকার পরিষদ


 রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক রেখেই রাশেদকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করল গণ অধিকার পরিষদ

 বাংলার পৃথিবীঃ    বিগত কয়েক মাস ধরেই গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্যসচিব নুরুল হক নুরের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। রেজা কিবরিয়ার অভিযোগ, নুরের কাছে আসা টাকার হিসাব তাঁর কাছে চাওয়া হলেও তিনি দিচ্ছেন না। অন্যদিকে নুরের অভিযোগ, ইনসাফ কায়েম কমিটির সঙ্গে রেজা কিবরিয়ার যোগাযোগ এবং সংগঠনবিরোধী নানা তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত রেজা কিবরিয়া। এমন পরিস্থিতিতে একাধিক মিটিংয়ের পর রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক রেখেই রাশেদ খানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করল গণ অধিকার পরিষদ।

জানা গেছে, রোববার (১৮ জুন) সন্ধ্যায় দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার গুলশানের বাসায় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দলীয় শৃঙ্খলা আনয়নের ক্ষেত্রে সদস্যসচিবকে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের কারণ ব্যাখ্যা চেয়ে আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার মতামত দিলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন রেজা কিবরিয়া সভা স্থগিত করেন। বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। দেশে ফিরে বাকি আলোচনার কথা ছিল।

তবে পরদিন সোমবার দলের সদস্যসচিব নুরুল হক নুরের সভাপতিত্বে বিকেল থেকে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবারও সভা আহ্বান করা হয়। রাত পর্যন্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়াকে স্বপদে রেখেই দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নির্বাচিত করা হয়।

এ বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদ যুগ্ম আহ্বায়ক ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গতকাল এক জরুরি সভায় দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়েছে। রেজা কিবরিয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তিনি দেশে ফিরলে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

দলের এই সভা ও সভায় দলের সিদ্ধান্তসমূহ রেজা কিবরিয়াকে অবহিত করা হয়েছে কি না—জানতে চাইলে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহাবুদ্দিন শুভ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দলের সদস্যসচিব এই সভা আহ্বান করেছেন। সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে আহ্বায়ক জানেন কি না আমি জানি না। তবে আমি যতটুকু জানি, এ বিষয়ে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি।’

এদিকে রোববার সভা শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক বিজ্ঞপ্তিতে রেজা কিবরিয়া লেখেন, ‘সভা চলাকালীন প্রবাসী অধিকার পরিষদের কমিটি পুনর্গঠন, ইতিমধ্যে সংগৃহীত অর্থের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি এবং সুষ্ঠু হিসাব ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা, দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে হুমকি এমন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও ইসরাইলের বিতর্কিত মোসাদ সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে গোপন বৈঠক, দলীয় নেতৃবৃন্দদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে অসত্য সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সদস্যসচিব নুরুল হক নুর।’

রেজা কিবরিয়া আরও বলেন, ‘দল পরিচালনার ক্ষেত্রে একক কর্তৃত্বের পরিবর্তে যৌথ নেতৃত্বের বিকাশে দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক উচ্চতর পরিষদ ও নির্বাহী পরিষদ গঠনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরবর্তী বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

অন্যদিকে নুরুল হক নুর সোমবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় জনৈক মাসুদ করিম/এনায়েত করিমের বিএনপি ভাঙা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আব্দুস সাত্তার মডেলে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কথিত সরকার বিরোধী প্রোগ্রামের নামে রেজা কিবরিয়ার ব্যাংকক, কাঠমান্ডুতে একাধিকবার মিটিংয়ে অংশ নেওয়া এবং দেশে এসে মনোনয়ন বিক্রি ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শওকত মাহমুদের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ এবং সর্বশেষ ইনসাফের প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার বিষয়ে গতকাল রেজা কিবরিয়ার বাসায় জরুরি মিটিংয়ে জবাবদিহি চাইলে তিনি সদুত্তর না দিয়ে নেতৃবৃন্দের প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে বাসার ছাদের মিটিং স্থান ত্যাগ করে বাসায় ঢুকে আর মিটিংয়ে আসেনি।’

নুর আরও বলেন, ‘যে কারণে আমরা তাঁর উপস্থিতিতে আর মিটিং করতে পারিনি। তাই উপস্থিত সদস্যদের মতামতে আমরা বাকি আলোচনা সম্পন্ন করে আজকে পূর্ব নির্ধারিত মিটিংয়ে অসমাপ্ত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হই।’

নিজের অপকর্ম ঢাকতে রেজা কিবরিয়া তাঁর বিষয়ে মিথ্যাচার করছে জানিয়ে নুর আরও বলেন, ‘রেজা কিবরিয়া কতটুকু অযোগ্য, সেটা তার কাজকর্মে ইতিমধ্যে আপনারা পর্যবেক্ষণ করেছেন। গণ অধিকার পরিষদের মতো একটা সম্ভাবনাময় দলের আহ্বায়ক হয়েও তিনি ওইভাবে দলের মিটিং-মিছিল, কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না। বরং টাকার লোভে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁদে পড়ে তিনি বিএনপি ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দুঃস্বপ্নে বিভোর। আমরা সেটাতে সমর্থন না দেওয়ায় আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে গণ অধিকার পরিষদে ভাঙন ও সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তর চেষ্টা করছে।’

ইতিমধ্যে দলের শীর্ষ এই দুই নেতার দ্বন্দ্বে দলে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা গেছে। দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, শিগগিরই দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্তভাবে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ