বাংলার-পৃথিবীঃ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। দেশবাসী সব সময় আমাদের দলের পাশে আছেন। তাই আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।
গতকাল বুধবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক মতবিনিময়ে এসব কথা বলেন তিনি।
বারবার প্রাণনাশের চেষ্টা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুলেট ও বোমার মুখোমুখি হয়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছি। আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে একটি কাজ দিয়েছেন এবং কাজটি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে রক্ষা করবেন। আমাকে রক্ষা করতে ওপরে আল্লাহ আছেন। আর মাঠে আমার দলের নেতাকর্মী আছেন। যখনই আমার ওপর কোনো হামলা হয়, দলের লোকেরা সব সময় আমাকে রক্ষা করে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২২ নেতাকর্মী নিহতের দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দলের লোকেরা তাদের জীবনের বিনিময়ে মানবঢাল বানিয়ে আমার প্রাণ রক্ষা করেছেন। আমি জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি, এটাই বড় কথা।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, গত ১৪ বছরে গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করেছি। মানুষের কল্যাণে যা যা করা দরকার, করছি। প্রত্যেক এমপিকে নিজ এলাকার মানুষকে দেখতে হয়। আমাকে দেখতে হয় ৩০০ আসনের মানুষকে।
মতবিনিময় সভায় গোপালগঞ্জ জেলা ও পাঁচ উপজেলার নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রী ধৈর্যের সঙ্গে তাদের বক্তব্য শোনেন। নেতাকর্মীকে সরকারের গত ১৪ বছরের উন্নয়নের কথা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করে নৌকায় ভোট চাওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী গত মঙ্গলবার ঢাকা-ভাঙ্গা রেল সংযোগের উদ্বোধন ও ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ড. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে মহাসমাবেশে ভাষণ দেন। এর পর তিনি ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছান। সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, দোয়া ও মোনাজাত করেন।
গতকালের মতবিনিময়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, দেশবাসীকে উন্নত ও সুন্দর জীবন দেওয়ার মাধ্যমে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছে। জনগণের কল্যাণে সম্ভাব্য সবকিছু করা হচ্ছে।
টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া আসনের জনগণকে বারবার ভোটের মাধ্যমে তাঁকে নির্বাচিত করার জন্য ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আপনজন হারানোর পরে দেশের মানুষ এবং আমার দলের নেতাকর্মীই আমার স্বজন। কাছের মানুষগুলো আমার পাশে না থাকলে সফল হওয়া সম্ভব হতো না।
প্রটোকল ভেঙে হেঁটে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী
এর আগে গতকাল টুঙ্গিপাড়ায় প্রটোকল ভেঙে নিজ বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার হেঁটে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার ও নিরাপত্তাকর্মীরা এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
নিজের রান্না করা খাবারে আপ্যায়ন
টুঙ্গিপাড়ায় নিজের রান্না করা খাবারের মাধ্যমে স্বজনদের আপ্যায়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার রাতে তিনি ইলিশ-পোলাও, গরু ও খাসির মাংস, সবজি, ডাল এবং কয়েক পদের মাছ রান্না করেন। স্বজনদের পাতে খাবার তুলে দেওয়ার পাশাপাশি সঙ্গে বসে খাবার খান বঙ্গবন্ধুকন্যা। আপ্যায়নে রকমারি মিষ্টান্নও রাখা হয়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, তাঁর ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়, প্রধানমন্ত্রীর চাচা শেখ নাদির হোসেন লিপু, গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ রকিব হোসেন, টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল ছাড়াও টুঙ্গিপাড়ায় বসবাসরত শেখ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর রান্না করা খাবার খেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
জানতে চাইলে টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজে রান্না করে শেখ পরিবারের সদস্য, স্বজনসহ সবাইকে খাইয়েছেন। রাতের খাবার তাঁর সঙ্গে খেয়েছি, এটি আমার পরম সৌভাগ্যের।’