বাংলার-পৃথিবীঃ এখন আর আকাশে মেঘ দেখে কিছুই বলা যায় না। আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তনের পালায় মেঘের আচরণও বিরূপ। শরতের মেঘেরও পালাবদল ঘটছে। এই সাদা মেঘের ভেলা, আবার বৃষ্টি। তারপর আবার অসহনীয় চিমসে গরম। দুপুরের তাপদাহের রেশ থাকে রাতের অনেকটা সময়। বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ। এই তাপপ্রবাহের মধ্যেও ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টিপাত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে বলে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় অনেক এলাকায় নদনদীর পানি বাড়ছে। কোথাও কোথাও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন মানুষ।
কক্সবাজারে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দ্বীপটিতে বেড়াতে গিয়ে আটকা পড়েছেন শতাধিক পর্যটক।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ আরও শক্তিশালী হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এরপর বাংলাদেশের স্থলভাগ অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
লঘুচাপের প্রভাব ও সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে আগামী এক সপ্তাহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। টাঙ্গাইল, বগুড়া, পঞ্চগড়সহ পাঁচ জেলা এবং দুই বিভাগে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি বেড়ে তাপমাত্রা কমে দু-এক দিনের মধ্যে দেশ থেকে তাপপ্রবাহ দূর হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
দু’দিন ধরে বাগেরহাটের শরণখোলা ও সুন্দরবনের ওপর দিয়ে থেমে থেমে বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। শনিবার স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে প্রায় তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবন ও উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে লঘুচাপের কারণে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় ফের বন্ধ হয়ে গেছে ইলিশ আহরণ। প্রবল ঢেউয়ে টিকতে না পেরে ইলিশ আহরণে নিয়োজিত ট্রলারগুলো শুক্রবার সকাল থেকে সাগর ছেড়ে নিরাপদে ফিরতে শুরু করে।
সতর্ক সংকেত
দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগামী দু’দিন পর সারাদেশে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ৩ অক্টোবর থেকে সারাদেশে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে। ৩ ও ৪ অক্টোবর সারাদেশে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এরপর বৃষ্টির প্রবণতা কমবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী জানান, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে গতকাল দুপুরের পর থেকে কক্সবাজারে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। সাগর উত্তাল থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত এই পথে সব নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে দ্বীপে আটকে পড়া পর্যটকের যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আটকে পড়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হচ্ছে সুন্দরবন। গতকাল দুপুরের পর তলিয়ে গেছে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের কটকা, কচিখালী ও দেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্র এবং পর্যটনস্থল করমজল। তবে এখন পর্যন্ত বন বিভাগের স্থাপনা কিংবা বন্যপ্রাণীর কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানান বন কর্মকর্তা আজাদ কবির।