বাংলার-পৃথিবীঃ নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিতে সরকারের ব্যয়ের বিষয়টি আরও যাচাই-বাছাই করতে হবে। এ ছাড়া দেশটি থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আনতে ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করতে দিল্লির সম্মতির প্রয়োজন। তাই ভারতের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় (বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল) চুক্তির প্রয়োজন।
একই সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানিতে শুল্ক নির্ধারণের বিষয়টিও অমীমাংসিত রয়েছে। এসব বিষয় ঠিক করে বিদ্যুৎ বিভাগকে একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে।
গতকাল রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ‘বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রকল্প, উৎপাদন খাতে আঞ্চলিক বিনিয়োগ, প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিষয়ে গৃহীতব্য কার্যক্রম তথা দ্রুত বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এসব কথা বলা। এতে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমানসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে পরামর্শ প্রদানে এ কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে কমিটি বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশি এবং বিদেশি যে কোনো বিদ্যুৎ সংস্থা বা কোম্পানির মধ্যে যৌথভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্যও পরামর্শ দিয়ে থাকে। নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট কত হতে পারে– এ বিষয়ে বৈঠকে জানতে চান অর্থমন্ত্রী।
এ প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। এ ক্ষেত্রে গড়ে দাম পড়ছে প্রতি ইউনিট সাত টাকার কিছু বেশি। ভারতের কোম্পানি আদানি পাওয়ার থেকে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেও বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দাম কিছু বেশি। তবে নেপাল থেকে আমদানি করা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম সাত টাকার কাছাকাছিই থাকতে পারে।
এ ছাড়া বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, শীতের সময় বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। এ সময় আবার নেপালে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে গেলেও কিছু কিছু এলাকায় বরফ পড়ায় বেশি পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন। তাই শীত মৌসুমে নেপাল বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। সে সময় বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা কম হওয়ায় উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ দেশটিতে রপ্তানি করা যাবে। আবার গ্রীষ্ম-বর্ষা মৌসুমে নেপালের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ আমদানি করা যাবে। এতে দুই দেশই লাভবান হবে।
বিদ্যুৎ আমদানির শুল্ক নির্ধারণ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, দেশে কোনো উদ্যোক্তা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। একইভাবে আমদানি করা বিদ্যুতেও একটা সময় পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ভারতের সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে এ বিদ্যুৎ আসায় ভারতকে ট্রান্সমিশন চার্জ ও সার্ভিস ফি দিতে হবে। এসব ফি কোন দেশ দেবে– এ বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। এ ধরনের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে একটি সারসংক্ষেপ প্রস্তাব আকারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী ওই প্রস্তাবে সম্মতি দিলে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
এদিকে বিদ্যুৎ আমদানির কার্যক্রম এগিয়ে নিতে গত মে মাসে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সেই অনুযায়ী, নেপালের ত্রিশুলি প্রকল্প থেকে ২৪ মেগাওয়াট এবং অন্য একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে বিক্রি করা হবে। চুক্তির মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। তবে নেপালের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ২৫ বছরমেয়াদি চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়।
গত জুন মাসে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল ভারত সফর করেন। ওই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয় নেপালের সঙ্গে। ওই চুক্তি অনুসারে নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আসবে ভারতের সঞ্চালন লাইন দিয়ে। এটি ভারতের বহরামপুর সঞ্চালন লাইন দিয়ে বাংলাদেশের ভেড়ামারায় জাতীয় গ্রিডে প্রবেশ করবে।