বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালুর কথা এক-দেড় বছর ধরেই বলে আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একই পরামর্শ গতকাল মঙ্গলবার আরও একবার দিয়েছে সংস্থাটি। আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বিনিময় হার নমনীয় করে বাজারভিত্তিকের দিকে যাওয়া উচিত।
গতকাল মঙ্গলবার রিজিয়নাল ইকোনমিক আউটলুক প্রকাশ উপলক্ষে সিঙ্গাপুর থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, একবার নমনীয় বিনিময় হার বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের হিসাবে বড় ধরনের স্থিতিশীলতা আসবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও মুদ্রা বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক না করায় সংস্থাটির পক্ষ থেকে আবারও এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ব্যাংকারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) বিনিময় হার নির্ধারণ করে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ৪৭০ কোটি ডলার। কিন্তু একই সময়ে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি হচ্ছে ৮৩০ কোটি ডলার। এ ঘাটতি এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় চার গুণ। আর্থিক হিসাবের মধ্যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এবং স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কম থাকার জন্য আর্থিক হিসাব ভালো নেই উল্লেখ করে কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, একই কারণে বাংলাদেশের স্থানীয় মুদ্রা টাকাও চাপের মধ্যে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মুদ্রা বিনিময় হার নমনীয় করার পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশ আর্থিক হিসাব ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল পাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত কয়েক বছরে বিশ্বের অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি বড় ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অর্থনীতিতে এগুলোর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। পুরো বিশ্বের মতো এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনীতিও ধাক্কা খেয়েছে। এসব বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, এই ধাক্কা থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। টেকসই পুনরুদ্ধারের জন্য রাজস্বনীতির সংস্কার যেমন দরকার, তেমনই দরকার মুদ্রা বিনিময় হারকেও নমনীয় করা।
বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি চলমান। এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক যাত্রা গত বছরের ৩০ জানুয়ারি থেকে। আইএমএফ দু্ই কিস্তির অর্থও ইতোমধ্যে ছাড় করছে। তৃতীয় কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা আগামী মাসে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে পুরো অর্থ দেওয়ার কথা। এ ঋণ কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি শর্ত পূরণের বিষয় আছে।
কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সমস্যা মোকাবিলা করার চেষ্টায় আছে বাংলাদেশ। দেশটি সক্রিয়ভাবে এ বিষয়ে আইএমএফের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে এবং আইএমএফ সেই সহায়তাও করছে। আর তাই সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে এখন কিছুটা ভালো করছে বাংলাদেশ।
আইএমএফ মনে করছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার হতে পারে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এ হার গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা কম। আগের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৬ শতাংশ। আইএমএফ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। সংস্থাটি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ছয় মাস আগের তুলনায় দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।