গ্রীষ্মের প্রখর সৌরতাপে তেতিয়ে উঠছে পরিবেশ। এমন তীব্র গরমে দীর্ঘ সময় বাইরে কাজ করলে অনেক ধরনের অসুখ-বিসুখ হতে পারে। প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় হিট স্ট্রোক। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে পরিণতি হতে পারে মারাত্মক।
উপসর্গ
বসা থেকে দাঁড়ালে যদি মাথা চক্কর দেওয়ার অনুভব তৈরি হয় কিংবা চোখে-মুখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনি উষ্ণতাজনিত চরম পরিশ্রান্তির শিকার। এর সঙ্গে শুরু হতে পারে মাথাব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, শ্রান্তি-ক্লান্তি, শারীরিক দুর্বলতা, মাংসপেশিতে ব্যথা এবং পেশিতে খিল লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা। প্রথমদিকে ঘাম নিঃসরণ বেড়ে গেলেও পরবর্তী সময়ে এটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা তখন হুহু করে বাড়তে থাকে। শরীরের তাপ ক্ষয় বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় মানসিক বিপর্যস্ততা, এলোমেলো আচরণ, মতিভ্রম, কথাবার্তায় আড়ষ্টতা, খিঁচুনি। একপর্যায়ে রোগী অজ্ঞান পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন পানিশূন্যতার লক্ষণ সম্পর্কে জানা এবং ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এ সময় প্রতি ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরপর পানি পান করা জরুরি। অতিরিক্ত ঘাম হলে লবণ-লেবুর শরবত গ্রহণ করতে হবে। বাইরে বেরোলে সঙ্গে পানির বোতল রাখা।
গরমের সময় সুতি কাপড়ের পাতলা ঢিলেঢালা জামা পরিধান করা দরকার, যাতে জামা-কাপড়ের ভেতর দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। হালকা রঙের জামা গরম আবহাওয়ায় স্বাস্থ্যবান্ধব। জুতা-মোজা অতিরিক্ত গরমের সময় পরিহার করতে হবে।
এ ছাড়া আঁটোসাঁটো, মোটা কাপড়ের জামাও পরিত্যাজ্য। তপ্ত গরমে কাজের ভেতর থাকলে মাঝেমধ্যে ছায়াঘন স্থানে বিশ্রাম নিতে হবে। কম আর্দ্রতাযুক্ত ঠান্ডা পরিবেশে অবস্থান করে বিশ্রাম নিতে হবে মাঝেমধ্যেই। পারলে ফ্যানের নিচে অবস্থান করতে হবে। কোনো কারণ না থাকলে অযথা উষ্ণ তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় বাইরে না থাকা।
অ্যালকোহল, কফি, অতিরিক্ত চা পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা এগুলো মৃদু মাত্রার পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত আমিষ, চিনি ও লবণাক্ত স্নাকসজাতীয় খাবার পানিশূন্যতাকে আমন্ত্রণ জানায়। গরমের মৌসুমে প্রখর রোদের মধ্যে গাড়ির ভেতর ভীষণ গরম হয়ে ওঠে। সে কারণে তীব্র রোদে শপিং কিংবা অন্য কারণে বাইরে বেরোলে গাড়িতেও সাবধানে থাকুন।
লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, বরিশাল।