দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর দুয়ারে হাজির হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। রমজান মাসে স্বাভাবিক কারণে দৈনন্দিন খাদ্য গ্রহণের সময়সূচির পরিবর্তন ঘটে। খাদ্যের মেন্যুও থাকে একটু অন্যরকম। ঈদের সকাল থেকেই শুরু হবে খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন। এ পরিবর্তন অনেক সময় স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। সে জন্য কয়েকটি বিষয়ের ওপর খুব বেশি জোর দিতে হবে।
ঈদের সকালে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা মোটেও ঠিক হবে না। এদিন সকালে সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ফিরনি, সেমাই খেতে পারেন। পাতলা পরোটা, সবজি হতে পারে নাশতা। অতিরিক্ত ঝাল, তৈলাক্ত ও মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। এমনটি না করলে সারাদিন পেটে একটা অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হতে পারে। দীর্ঘ এক মাসের সকালবেলায় খাদ্য গ্রহণের অনাভ্যাস থেকে এমনটি হয়।
ঈদের দিন অতিরিক্ত ও ঘন ঘন খাদ্য গ্রহণ করার ফলে অনেকেরই পেটে গ্যাস, পেট ফুলে যাওয়া এবং ডায়রিয়া কিংবা ফুড পয়জনিং হতে পারে। সে কারণে খাদ্য গ্রহণের একটা পরিকল্পনা থাকা ভালো।
ঈদের দিন গরু বা খাসির মাংস গ্রহণের সঙ্গে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের সম্পৃক্ততা রয়েছে। কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এসব খাদ্যে উচ্চমানের প্রোটিন থাকার কারণে যাদের লিভার ও কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য সমূহ ক্ষতি নেমে আসতে পারে। যারা পিত্তাশয়ে পাথর নিয়ে ভুগছেন, তাদেরও অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করার ফলে পেটে তীব্র ব্যথা শুরু হতে পারে। সে জন্য যাদের এসব রোগ রয়েছে, তাদের লাল মাংসসহ চর্বিজাতীয় খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা দরকার।
ঈদের দিন ডায়াবেটিস রোগীরা বাড়তি খাবার গ্রহণের ফলে জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারেন। ঈদের সকালে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ জেনে নিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ অথবা ইনসুলিন গ্রহণপূর্বক খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণ করার ফলে এ সময় অনেক ডায়াবেটিস রোগী জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। সে জন্য খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে।
ঈদের দিন অন্যদিনের তুলনায় বেশি ঘোরাঘুরি, হাঁটাহাঁটি হয়। বাইরে এখন ভয়ানক তাপদাহ চলছে। গরমের কারণে প্রচুর ঘাম হয়। সে জন্য ঈদের দিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানীয় গ্রহণ করা দরকার। ঘামের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে গেলে লবণ-লেবুযুক্ত শরবত খুবই কার্যকর। সাধারণ পানি গ্রহণের পাশাপাশি এটিও গ্রহণ করা জরুরি।
লেখক : মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, বরিশাল।