জন্মের সময় নবজাতকের ওজন যদি আড়াই কেজির কম হয়, তাহলে ধরে নেওয়া হয় শিশুটি এলবিডব্লিউ বা লো বার্থ ওয়েট বেবি। এই ওজন যদি দেড় কেজিরও কম হয়, তাহলে তাকে খুব কম ওজনের শিশু বা ভেরি লো বার্থ ওয়েট বেবি এবং ৭৫০ গ্রামের কম ওজনের হলে চরম ওজনহীন শিশুকে এক্সট্রিম লো বার্থ ওয়েট বলা হয়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কিশোরী মায়ের সন্তানের ওজন সাধারণত খুব কম হয়। আবার গর্ভের শিশু অপরিণত বয়সে ভূমিষ্ঠ হলেও ওজন খুব কম হয়। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় মায়ের যদি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, পুষ্টিহীনতা, রক্তশূন্যতা, বড় কোনো ইনফেকশন, একলাম্পসিয়া, অতিরিক্ত রক্তস্রাব বা এ ধরনের জটিল কোনো রোগ থাকে, তাহলে নবজাতকের ওজন কম হতে পারে। যমজ শিশু বা জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশুর ওজন কম হতে পারে। ধূমপায়ী, মাদকাসক্ত মায়েদের সন্তানেরও জন্মের সময় ওজন বেশ কম থাকে।
অন্য নবজাতকের তুলনায় কম ওজনের নবজাতক খুব সহজেই রোগাক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। তাই এসব শিশুর ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন নিতে হয়। সব সময় শিশুকে উষ্ণ রাখতে হবে, তাপমাত্রা কমতে দেওয়া যাবে না, পরিষ্কার হাতে শিশুকে ধরতে হবে এবং শিশুর পরিধানের কাপড়ও খুব পরিষ্কার রাখতে হবে। শ্বাস নিতে কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে মুখের ভেতরের লালা এবং নাকের সর্দি পরিষ্কার করে দিতে হবে।
চিকিৎসা
শিশুর ওজন বেশ কম হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে শিশু বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে। সঠিক পুষ্টির জন্য মায়ের দুধের পাশাপাশি নাকে নল দিয়ে খাবার দেওয়া, এমনকি শিরার মাধ্যমেও খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। শিশুর তাপমাত্রা কমে গেলে তাকে ইনকিউবেটরে দিতে হবে। ইনফেকশন প্রতিরোধ করার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অ্যান্টিবায়োটিক, সেই সঙ্গে কিছু ভিটামিন এবং ফেনোবারবিটোন জাতীয় ওষুধও দিয়ে থাকেন। নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর অবস্থা খুব খারাপ হলে তাকে এনআইসিইউতে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া লাগতে পারে। এনআইসিইউ ইনকিউবেটরে সঠিক তাপমাত্রা, অক্সিজেন সর্বোপরি সেবা-শুশ্রূষার মধ্য দিয়ে এই কম ওজনের শিশুকে আলোর মুখ দেখানো সম্ভব।
লেখক : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।