গর্ভাবস্থায় নানা অসতর্কতা অনাগত সন্তানের বিপদ ডেকে আনে। বিশেষ করে প্রথম ও মধ্য প্রান্তিকে অন্তঃসত্ত্বা নারী যদি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বা হিস্টাসিন জাতীয় ওষুধ সেবন করেন, তবে তা অনাগত শিশুর শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক ওষুধ ভ্রূণের অঙ্গ সৃষ্টিতে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে শিশু যে কোনো ধরনের বিকলাঙ্গতা বা প্রতিবন্ধী দশা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে।
গর্ভবতী মা যদি দীর্ঘদিন ধরে রক্তস্বল্পতায় ভোগেন, পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার না খান, তবে ভ্রূণের গঠনগত বিকলাঙ্গ দেখা দেয়, মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়। ফলে শিশু বিকলাঙ্গ অথবা প্রতিবন্ধী হয়। খাবারে ফলিক এসিডের ঘাটতি থাকলেও অনাগত শিশুর ব্রেন ঠিকমতো তৈরি হতে পারে না।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে মা যদি যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, জার্মানহাম, চিকেন পক্স, রুবেলা ভাইরাস, এইডস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হন, তবে গর্ভস্থ শিশুর ওপর তার প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়। এর ফলে ছেলেমেয়ে শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ ও মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে।
এ ছাড়া মায়ের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির সমস্যা, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা প্রভৃতি শারীরিক অবস্থায় গৰ্ভস্থ শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় মাদকাসক্ত হলে অর্থাৎ যেসব নারী নিকোটিন, প্যাথিডিন, হেরোইন বা এমফিটামিনে আসক্ত, তাদের গর্ভস্থ শিশু অধিক হারে জন্মগত বিকলাঙ্গতার ঝুঁকিতে থাকে।
গর্ভধারণের সময় মায়ের বয়স কম বা বেশি দুটিই শিশুর জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অপরিণত বয়সে প্রজনন অঙ্গের বিকাশ সম্পূর্ণ হয় না। তাই অপরিণত বয়সে মা হলে ত্রুটিপূর্ণ সন্তান জন্ম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার বেশি বয়সে হরমোন গ্রন্থির স্বাভাবিক কার্যাবলি হ্রাস পায়। এ ছাড়াও এসব মায়ের সন্তানদের ডাউন সিনড্রোম হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই ৩৫ বছরের পর যেসব নারী প্রথম সন্তান জন্ম দেন, সেসব ছেলেমেয়ে বিকলাঙ্গ বা প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
গর্ভাবস্থায় মা যদি ঘন ঘন খিঁচুনি রোগে আক্রান্ত হন, তবে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে অক্সিজেনের অভাব ঘটে এবং তার মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ ধরনের বার্থ এসফেকশিয়ার কারণে সন্তান মানসিক প্রতিবন্ধী বা বিকলাঙ্গ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রবেশ, বিশেষত প্রথম তিন মাস এক্স-রে বা অন্য কোনোভাবে মায়ের দেহে যদি তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রবেশ করে, তবে গর্ভস্থ ভ্রূণের নার্ভতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী বা বিকলাঙ্গ হয়।
লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান শিশু বিভাগ, জাতীয় হদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল