নিউমোনিয়ায় সতর্কতা জরুরি
প্রথম পাতা » ফিচার » নিউমোনিয়ায় সতর্কতা জরুরিনিউমোনিয়া হচ্ছে ফুসফুসের এক প্রকার ইনফেকশন বা ফুসফুসের কোষ ‘প্যারেনকাইমা’র প্রদাহ। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণের কারণে নিউমোনিয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগে শিশুর জন্ম, ওজন কম, অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, টিকা সময়মতো না দেওয়া অথবা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা, যেমন– জন্মগত হৃদরোগ হলে শিশু নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
শিশু আরএস ভাইরাসে আক্রান্ত হলে চার থেকে ছয় দিন সময় লাগে এবং ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত হলে রোগ প্রকাশ হতে এক থেকে তিন দিন সময় লাগে। ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়ায় শরীরে জীবাণু প্রবেশের পর রোগ প্রকাশ হতে এক দিন থেকে শুরু করে দুই সপ্তাহ সময় লাগে। আবার টিবিজনিত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের রোগ সংক্রমণ প্রকাশ হতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।
লক্ষণ
১. প্রচণ্ড জ্বর, কাশি, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট হলো নিউমোনিয়ার প্রধান লক্ষণ।
২. এক বছরের বেশি এবং পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের প্রতি মিনিটে শ্বাস-প্রশ্বাস ৪০ বা তার বেশি হলে আমরা সেটিকে নিউমোনিয়ার কারণেই দ্রুত শ্বাস হিসেবে ধরে নিই।
৩. জ্বরের সঙ্গে বাচ্চার শ্বাসকষ্ট, বুক দেবে যাওয়া– এসব লক্ষণ দেখা দেয়। শ্বাসকষ্টের কারণে শিশু মুখে খাবার নিতে পারে না এবং ঘুমাতেও পারে না।
জটিলতা
নিউমোনিয়া জন্মগত হৃদরোগ, সিসটিক ফাইব্রোসিস বা ক্যান্সারের জটিলতার কারণে হলে এর সঙ্গে শারীরিক নানা সমস্যাও দেখা দিতে পারে। নিউমোনিয়া থেকে জটিলতাস্বরূপ ফুসফুসে পানি, ফুসফুসে পুঁজ অথবা ফুসফুস একেবারে চুপসে যেতে পারে।
নিউমোনিয়া থেকে পুষ্টিহীন বা রোগ প্রতিরোধহীন শিশুরা এনকেফালাইটিস বা মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
চিকিৎসা
নিউমোনিয়ার রোগীদের নাকে সর্দি জমে থাকার কারণে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এ জন্য বাচ্চার নাক লবণপানির দ্রবণ দিয়ে খাবার ও ঘুমের আগে পরিষ্কার করে রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজন হলে শিশুকে স্টিম ভ্যাপার বা নেবুলাইজারের মাধ্যমে সোডিয়াম ক্লোরাইডের দ্রবণ (সলো বা নরসোল) দেওয়া যেতে পারে। কাফ মেডিসিন বা ব্রঙ্কোডাইলেটর গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় শ্বাসকষ্ট বেশি হলে অক্সিজেন গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়া হলে যথাযথ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
নিউমোনিয়ায় যখন হাসপাতালে নেওয়া জরুরি
• শ্বাস নেওয়ার সময় শিশুর পেট ভেতরে ঢুকে গেলে।
• শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে।
• শ্বাস নেওয়ার সময় নাক ফুলে উঠলে।
• মুখ ও ঠোঁটের চারপাশ নীল হয়ে গেলে।
• শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলে।
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, শিশু বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।