এখন সময়টা স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট, ফেসবুকের। শিশু-কিশোর ছেলেবুড়োসহ সবার হাতেই এখন স্মার্টফোন। এই মাধ্যমগুলো মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করেছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব বিপ্লব ঘটিয়েছে। বিশেষ করে স্মার্টফোন আসার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে তেমনি রয়েছে অপকারিতাও! শিশু-কিশোর ও তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ এই স্মার্টফোনের অপব্যবহার করছে। নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মা-বাবা, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছে। পড়ালেখায় স্মার্টফোন এর প্রয়োজনিয়তা থাকলেও অনেক শিক্ষার্থী এটাকে এক্ষেত্রে খুব বেশি ব্যবহার করেনা। গেমস, কন্টেন্ট তৈরিসহ ইন্টারনেটের নানা কাজে সময় ব্যয় করছে। এখন বাড়িতে শিশুদেরকে ভাত খাওয়াতে আর কান্না বন্ধ করতে এন্ড্রয়েড ফোনে গেমস খেলায় ব্যস্ত রাখতে হয়! এমন অবস্থা! কিশোর-তরুণরা এই ডিভাইসকে অনৈতিক ও চরিত্রবিধ্বংসী কাজে ব্যবহার করছে। এর ফলে সমাজে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। স্মার্টফোনের কল্যাণে ইন্টারনেট, ফেসবুক আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ার কারণে শিশু-কিশোরদের মেধা নষ্টের পাশাপাশি তাদের নৈতিক চরিত্রেও ঘুণ ধরছে। বাড়িতে বাবা-মায়ের কথা শুনছেনা তারা। মেজাজ হয়ে যাচ্ছে খিটখিটে। রাত করে বাড়ি ফিরছে। গভীর রাত পর্যন্ত বাইরে, নিজের কক্ষে, রাস্তা-ঘাটে, বন্ধু-বান্ধবের সাথে বসে স্মার্টফোন দিয়ে ইন্টারনেট এর নানা ভিডিও, কন্টেন্ট দেখায় ব্যস্ত থাকছে। দিনরাত খেয়ে না খেয়ে এগুলো নিয়ে পড়ে থাকার কারণে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতেও রয়েছে তারা। স্মার্টফোনের স্ক্রীনে একনাগারে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের দৃষ্টি কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায়না। এসব আমাদের জন্য অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। জীবন গঠনের এই সময়ে যদি আমাদের সন্তানরা তাদেরকে অন্ধকারের অতল গহŸরের দিকে নিয়ে যায় তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছুই হতে পারেনা। এগুলো নিয়ে ভাবনা এবং এ থেকে উত্তোরণের পথ বের করতে হবে আমাদেরকেই। এক্ষেত্রে প্রধানত অভিভাবকদের দায়িত্বই মুখ্য। তাদেরকেই নিতে হবে প্রথম পদক্ষেপ। আমার, আপনার সন্তানের জীবনের জন্য হলেও স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে আসক্তি কমিয়ে আনার একটি সুন্দর পন্থা তৈরির কোন বিকল্প নেই। স্মার্টফোন আসক্তি কমিয়ে আনার পাশাপাশি এই মাধ্যমকে তারা যেন ভালো কাজে ব্যবহার করে সেজন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।শিশুর কোমল মন থেকে মোবাইল আসক্তি কাটানো খুব সহজ নয়। তার প্রবল ঝোঁকের বা আগ্রহের জায়গাটা খুঁজে মোবাইলের সম বিকল্প ও আকর্ষণীয় জিনিসের প্রতি তার আগ্রহকে বাড়িয়ে তুলতে পারলে তবেই শিশুর মুঠোফোনের প্রতি আসক্তি কমবে। সন্তানকে সময় দেওয়া জরুরি। তার বদলে হাতে স্মার্টফোন দেওয়াটা একেবারে অনুচিত। অনেক শিশু একাকিত্বের কারণে মোবাইল ফোনের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বাবা-মায়ের প্রথমত খেয়াল রাখা উচিত শিশু স্মার্টফোন ব্যবহার করেও প্রতিদিনের কার্যকারিতা সঠিকভাবে পালনে সক্ষম কিনা। যদি তা নির্দ্বিধায় করে সেক্ষেত্রে ১-২ ঘণ্টা ফোন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যায়। বাড়ির আবহে পড়াশোনা-খেলাধুলার পরিবেশ থাকা অত্যন্ত জরুরি। ঘরের ছোট্ট খুদেটির সঙ্গে বাবা-মায়ের কোয়ালিটি টাইম কাটানো উচিত। সপ্তাহে একদিন বাড়ির প্রত্যেক সদস্যের জন্য একটি স্মার্টফোনবিহীন দিন রাখা যায় চাইলে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন খেলাধূলা, ছবি আঁকাসহ সংশ্লিষ্ট কো-কারিকুলাম এক্টিভিটিসের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে হবে। কিশোর, তরুণরা যেন চরিত্র গঠন ও ধর্মীয় কাজে এই স্মার্টফোনকে কাজে লাগাতে পারে সেজন্য নানা কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। ভালো বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও এ ব্যাপারে অনেক কিছু করার আছে বলে আমি মনে করি।
বর্তমানে স্মার্টফোন মানেই ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি আর গেমস খেলা। এ কারণে কেবল স্মার্টফোন নয় শিশু-কিশোর, তরুণদের ইন্টারনেট আসক্তি কমিয়ে আনা তথা দূর করারও পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে শিশু-কিশোর, তরুণদের স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট আসক্তি দূর করতে হবে।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট