কোমর বা ঘাড়ব্যথা কোনো রোগ নয়, এটি রোগের লক্ষণ মাত্র। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো শুধু ব্যথার ওষুধ সেবন করে বা কিছু ব্যায়াম করে সাময়িক সময়ের জন্য হয়তো কোমর, ঘাড় বা অন্য কোনো শারীরিক ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব; কিন্তু ব্যথার কারণ নির্মূলে অবশ্যই আপনাকে রোগ সারানোর চিকিৎসা বা ডিজিজ মোডিফাইং ট্রিটমেন্ট করতে হবে।
কোনগুলো রোগ সারানোর চিকিৎসা?
ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে অসুখ হলে শরীরে ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংসের জন্য আমরা যে অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স করে থাকি, সেটাই সহজ বাংলায় রোগ সারানোর চিকিৎসা। কিন্তু শারীরিক ব্যথার কারণগুলো এত সুনির্দিষ্ট হয় না এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো মোডিফাই করার জন্য কোনো ওষুধ পৃথিবীতে নেই। ব্যথার কারণ নির্মূলে তাই আমাদের নির্ভর করতে হয় সুনির্দিষ্ট ব্যায়ামের ওপর। নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে যেমন সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়, ঠিক তেমনি ব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয়পূর্বক সুনির্দিষ্ট ব্যায়াম করতে হয়। ধরুন, আপনার কোমর ব্যথার কারণ হলো স্পন্ডাইলোলিসথেসিস বা হাড় সরে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে যদি আপনি ব্যাক এক্সটেনশন এক্সারসাইজ করেন, তাহলে তা হিতে বিপরীত ফল আনবে। আবার যদি দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা হয় মানসিক কারণে, তাহলে কোনো ধরনের এক্সারসাইজ করবেন না।
রোগীদের করণীয় কী?
ইউটিউব বা ফেসবুক খুললেই নানা ধরনের ব্যায়ামের কৌশল দেখতে পাওয়া যায়। এ ধরনের ব্যায়াম বেশির ভাগ সময়ই বিপদ ডেকে আনে। ইউটিউব ব্যায়াম করে কোমর, ঘাড় বা হাঁটুর ইনজুরিতে পড়া রোগীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। একটা ব্যায়াম কত ভিউ পেল, সেটা দেখেই অনেক রোগী মনে করেন তাঁর সমস্যা সমাধানেও এ ব্যায়াম কাজ করবে। আসলে এটি ভুল ধারণা। প্রত্যেক মানুষের শরীর বিভিন্ন অবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করে এবং ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসার প্রতি সংবেদনশীল থাকে। সারাবিশ্বে তাই পার্সোনালাইজড চিকিৎসার গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। পার্সোনালাইজড চিকিৎসার মূল মন্ত্র হলো রোগীর চিকিৎসা। এ চিকিৎসা রোগীর চাহিদা অনুযায়ী সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করে এবং বলা বাহুল্য, এ ধরনের চিকিৎসার ফলাফল খুবই ভালো।
মনে রাখা ভালো, অসুখ হলে আপনি যেমন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসি থেকে কিনে ওষুধ সেবন করে বিপদ ডেকে আনবেন না, ঠিক তেমনি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখানো নানা জনপ্রিয় ভুল ব্যায়াম করে ব্যথা বাড়িয়ে তুলবেন না। সুনির্দিষ্ট বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন, সুস্থ থাকুন।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাব বিভাগ, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।